মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১

বোয়ালখালীতে জমির বিরোধ: পুলিশের ‘কিছু করার নেই’, তবুও কেন এসআইয়ের ফোন?

একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ৭:৩৮ অপরাহ্ন


চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধে পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব এবং নির্মাণাধীন দোকান ভাঙচুরে মদদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ভুক্তভোগী আবদুল মাবুদ চৌধুরী (৬২) চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (পটিয়া সার্কেল) কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে বোয়ালখালী থানার এসআই আকবর ও ওসি গোলাম সরোয়ারসহ চারজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পূর্ব গোমদন্ডীতে ১৭.৩১ শতক জমি নিয়ে আবদুল মাবুদ চৌধুরীর সাথে জহির আহমদ ও শহীদুল ইসলাম মিন্টুর বিরোধ চলে আসছে। মাবুদ চৌধুরীর দাবি, তিনি বৈধ কাগজপত্র ও আদালতের রায় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জমিটি ভোগদখল করে আসছেন। অন্যদিকে, প্রতিপক্ষ জহির আহমদ ও শহীদুল ইসলাম মিন্টু জোরপূর্বক জমি দখলের চেষ্টা করছেন।

অভিযোগে মাবুদ চৌধুরী উল্লেখ করেন, গত ২৭ জানুয়ারি এসআই আকবর তাকে থানায় ডেকে নিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে আপস করতে এবং বিরোধপূর্ণ জমি থেকে চারটি দোকান ছেড়ে দিতে চাপ দেন। তিনি আপসে রাজি না হলে এসআই আকবর তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।

মাবুদ চৌধুরী আরও অভিযোগ করেন, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে তার নির্মাণাধীন দোকান ভাঙচুর করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার কিছুক্ষণ পর এসআই আকবর তাকে ফোন করে বলেন, ‘ওসি সাহেব আপনাকে সালাম দিয়েছেন, কালকে আপনি ওসি সাহেবের সাথে দেখা করে যাবেন’। ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই আকবর বলেন, ‘আপনাকে তো বলছিলাম আদালতে যান।’

মাবুদ চৌধুরীর অভিযোগ, প্রতিপক্ষ জহির আহমদ একজন মাদক ব্যবসায়ী এবং তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। তিনি তার মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যদের নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন।

এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে বোয়ালখালী থানার ওসি গোলাম সরোয়ার বলেন, “শহীদুল ইসলাম মিন্টু থানায় অভিযোগ করে জানিয়েছেন, আদালতের আদেশ থাকার পরও তার জায়গা অন্য ব্যক্তিরা দখল করে ফেলেছে। অভিযোগ পাওয়ার পর মোবাইল টিমের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর দেখে এসেছিল। তখন আমি অভিযোগকারীকে বলেছিলাম, আমাদের কিছু করার নাই। এটা আদালতে গিয়ে মিমাংসা করতে হবে। এখানে গন্ডগোল করা যাবে না।”

ওসি গোলাম সরোয়ার একদিকে বলছেন, পুলিশের কিছু করার নেই, আবার অন্যদিকে এসআই আকবরকে ঘটনাস্থলে পাঠাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠছে, যদি পুলিশের কিছু করার না-ই থাকে, তাহলে এসআই আকবরকে দিয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি মাবুদ চৌধুরীকে ফোন করার উদ্দেশ্য কি ছিল? এসআই আকবরকে দিয়ে বলানোর মাধ্যমে কি তিনি কোনোভাবে পক্ষ অবলম্বন করছিলেন?

জানতে চাইলে এসআই আকবর বলেন, “শহীদুল ইসলাম মিন্টু থানায় অভিযোগ করেছে, ওসি স্যার আমাকে দেখতে বলেছিলেন। আমি ২৭ জানুয়ারি ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেছিলাম, আপনারা সন্ধ্যায় থানায় আসেন। দুই পক্ষ থানায় আসার পর আমার সাথে আলোচনা করার পর দেখলাম, এটা আদালতের বিবেচ্য বিষয়। দুই পক্ষকেই বলেছি, এখানে আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোনও বিষয় নাই। এটা আদালতের বিষয়। আপনারা দুই পক্ষ আদালতে চলে যান। পরামর্শ দেওয়ার পর ওনারা বিদায় নিয়ে চলে গেছেন, এই ঘটনা এখানেই শেষ।”

এসআই আকবর বলছেন, তিনি শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলেন যে এটা আদালতের বিষয়। তাহলে তিনি কেন ৩ ফেব্রুয়ারি আবদুল মাবুদ চৌধুরীকে ফোন করে থানায় ডেকেছিলেন?

এ বিষয়ে এসআই আকবর বলেন, গতকাল (৩ ফেব্রুয়ারি) ওসি স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, এটার (শহীদুল ইসলাম মিন্টুর অভিযোগ) কী অবস্থা? তখন আমি ওসি স্যারকে বলেছি, দুই পক্ষকে আদালতে চলে যেতে বলেছি। ওসি স্যার বললেন, তাহলে দুই পক্ষকে আরেকটু ডাকেন। তখন কালকে রাতে আমি আবদুল মাবুদ চৌধুরীকে ফোন দিয়ে বলেছি, ওসি স্যার আপনাকে সালাম দিয়েছেন। একটু এসে স্যারের সাথে দেখা করে যাইয়েন। এই পর্যন্তই। এই কথাটি ওনি কীভাবে নিয়েছেন, এটা তো ওনার বিষয়। কারণ জায়গা জমির বিষয় তো, হস্তক্ষেপ করার প্রশ্নই আসে না। জায়গা জমির বিষয়ে আমরা থানায় অভিযোগও নিই না। তারপরও অভিযোগ নিলে আমরা গিয়ে দেখি। এরপর আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে চলে আসি। আবদুল মাবুদ চৌধুরীকেও এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

এসআই আকবর নিজেই স্বীকার করছেন যে, “জায়গা জমির বিষয়ে আমরা থানায় অভিযোগও নিই না।” তাহলে শহিদুল ইসলাম মিন্টুর অভিযোগ তারা নিলেন কেন এবং পুরো প্রক্রিয়ায় তিনি ও ওসি জড়িত হলেন কেন, সেই প্রশ্ন এখন উঠছে।