যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির নতুন দুয়ার উন্মোচন হতে পারে কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পণ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত বাড়তি শুল্কের কারণে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনাও দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
তবে, রপ্তানিমুখী শিল্পে উপযুক্ত নীতিসহায়তা না দেওয়া হলে এই সম্ভাবনার পুরোটাই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দখলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, ভারত সরকার ইতোমধ্যে রাজ্যভেদে বস্ত্র খাতে বড় অঙ্কের কর রেয়াত, নগদ সহায়তাসহ নীতিসহায়তার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) পৃথক তিনটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যে বর্তমান হারের অতিরিক্ত আরও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।
বাংলাদেশ নিট পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে আছে। ট্রাম্প প্রশাসন কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়ানোয় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন হয়েছে। এ সুযোগ নিতে এখনই সরকারকে সময়োপযোগী নীতি গ্রহণ করা উচিত। দেরি করলে বিনিয়োগ-ব্যবসা সবই পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি আরও বাড়াতে কূটনীতিকদের সোচ্চার হতে হবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চাহিদা মেটাতে গার্মেন্টস মালিকরা যাতে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারেন, সেজন্য নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি এবং এলসি খোলার প্রয়োজনীয় ডলারের সংস্থান করতে হবে।”
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, “সরকার বাংলাদেশের কারখানাগুলোর জোগান দিতে পারছে না। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দ্বিগুণ করা দরকার ছিল। কিন্তু সেটা আরও কমানো হয়েছে। এ কারণে নসিবে থাকার পরও বাংলাদেশের সুবর্ণ সুযোগ হারিয়ে যাচ্ছে।”
অন্যদিকে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, “বাণিজ্যযুদ্ধে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। তবে যতই সম্ভাবনা থাকুক না কেন, সেটা কাজে লাগানো যাবে না, কেননা নীতিনির্ধারকরা চান না সেই ব্যবসা বাংলাদেশে আসুক।”
তিনি আরও বলেন, “বাণিজ্যযুদ্ধের আঁচ করতে পেরে গত বছরই ভারত টেক্সটাইল খাতে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে। রাজ্যভেদে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিয়ে দিচ্ছে, জমি অধিগ্রহণে ব্যবসায়ীদের সহায়তা করছে। আর বাংলাদেশ করছে ঠিক এর উলটোটা।”
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, “ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। চীনের তৈরি পোশাকের ওপর শুল্ক বাড়ানোয় স্বল্পমেয়াদে বিদেশি ক্রেতারা এবং চীনের পোশাক উৎপাদকরাও বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকতে পারেন। মধ্যমেয়াদে চীনের পোশাক উৎপাদকরা বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করতে পারেন।”
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমেরিকায় বাংলাদেশ প্রায় ৭৬০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৭ শতাংশের বেশি।