চবি হলুদ দলের গলার কাটা সেই দুই শিক্ষক!

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে দলের দুই শিক্ষক; তারা এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে হলুদ দলের গলার কাটা।

আসন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট নির্বাচনে সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরি থেকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক মো. এয়াকুব ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাদাত আল সাজিব। অথচ দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রিদওয়ান মোস্তফাকে।

জানা গেছে, গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় শহরের শিক্ষক ক্লাবে হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে হলুদ দল থেকে অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে পরিসংখ্যান বিভাগের ড. এমদাদ, সঙ্গীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে ড. সুকান্ত, সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরি নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রিদওয়ান মোস্তফা, প্রভাষক ক্যাটগরিতে বিবিএ অনুষদের শিক্ষক সেতুরঞ্জনকে মনোনয়ন দেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে গিয়ে সাদাত আল সাজিব ও মোহাম্মদ এয়াকুব সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেট নির্বাচন করতে ফরম জমা দেন।

হলুদ দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যদি কোনো সদস্য নির্বাচন করে তাহলে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. সুলতান আহমদ বলেন, যে কোনো কারণে দলের দুই জন সদস্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। ২১ নভেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ আছে। আশাকরি দলের আনুগত্য তারা করবেন। তাদের সাথে স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যারা কথা বলবেন।

এদিকে হলুদ দলের সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী এয়াকুব ও সাদাত আল সাজিব। হলুদ দলের কয়েকজন শিক্ষক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক এক ডিনের অভিযোগ, বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত শর্ত পূরণ না করেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে আবেদন করেছিলেন মোহাম্মদ এয়াকুব। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষার কার্ডও প্রথম দিকে তাকে সরবরাহ করেনি। পরে তৎকালীন প্রশাসনে দায়িত্বপালনকারী লোকপ্রশাসন বিভাগের দুই সিনিয়র শিক্ষক প্রশাসনকে চাপ দিয়ে তাকে কার্ড ব্যবস্থা করে দেন। এবং তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করতে বাধ্য করেন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ওই বিজ্ঞাপন অনুযায়ী স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরের যেকোন একটিতে ৩.৫০ এবং ৩.৬৫ পয়েন্ট থাকতে হবে প্রার্থীর। কিন্তু মো. এয়াকুবের তা ছিল না। আবার স্নাতকে ৩.৩৭ ও স্নাতকোত্তরে ৩.২৫ পেয়ে বিগত প্রশাসনের সময়ে তৎকালীন কয়েকজন শিক্ষকের অনুকম্পায় শিথিল করা বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে শিক্ষক হয়েছেন সাদাত আল সাজিব। এমন বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় কম পয়েন্টধারী নিয়োগপ্রাপ্ত এ শিক্ষকরাই এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে হলুদ দলের।

এ বিষয়ে হলুদ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক মো. এয়াকুব বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আমি দলের গঠনতন্ত্র ভেঙেছি কিনা- সে ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন হলুদ দলের আহ্বায়কসহ অন্য সিনিয়র স্যাররা। আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।

অপর বিদ্রোহী প্রার্থী নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাদাত আল সাজিব বলেন, সিন্ডিকেট নির্বাচনে সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরি থেকে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সহকারী অধ্যাপকের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ওই পদে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা আমি রাখি। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।

এদিকে, বিদ্রোহী দুই প্রার্থীর পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, আওয়ামী শিক্ষকদের সংগঠন ‘হলুদ দল’ মনোনীত প্রার্থী রিদওয়ান মোস্তফা ২০০১ সালের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওয়াল হল শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাদের প্রশ্ন, ছাত্রদলের সাবেক নেতা কী করে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদলের মনোনীত প্রার্থী হতে পারে?

অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও হলুদ দলের মনোনীত সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরির প্রার্থী রিদওয়ান মোস্তফা বলেন, হলুদ দলের পক্ষ থেকে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট নির্বাচনে সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমি বদ্ধপরিকর। আমি শিক্ষাজীবনের শেষ দিকে কিছুদিন স্যার এ এফ রহমানের হলের আবাসিক ছাত্র ছিলাম। ছাত্রজীবনে কোন ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম না। সিন্ডিকেট নির্বাচন কেন্দ্রীক দলের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের উদ্দেশ্য প্রণোদিত, অবান্তর, হাস্যকর কোন অভিযোগের বিষয়ে আমার মন্তব্য করে কাউকে প্রতিপক্ষ বানাতে চাইনা। শিক্ষকতা জীবনের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর অাদর্শ লালন ও আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত আছি বলেই দল আমার উপর আস্থা রেখে সিন্ডিকেট নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছে।