আমানত তুলছেন গ্রাহক, এখনও সংকটে ইসলামী ব্যাংকগুলো


সম্প্রতি বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় শরিয়াভিত্তিক বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা আমানত তুলতে শুরু করেছেন, যার ফলে ব্যাংকগুলোর সার্বিক আমানতের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসে শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলো থেকে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি আমানত তুলে নেওয়া হয়েছে। এর আগের তিন মাসেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সাড়ে ৮ হাজার কোটির বেশি টাকা তুলে নিয়েছিলেন গ্রাহকরা।

বর্তমানে দেশে ১০টি পূর্ণাঙ্গ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক রয়েছে। এদের মধ্যে ৫টি ব্যাংক চট্টগ্রামের বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অভিযোগ রয়েছে, বিগত হাসিনা সরকারের সময়ে এসব ব্যাংকে ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে, যার ফলে ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ন্যূনতম জমা (সিআরআর) ও তরল সম্পদ (এসএলআর) রাখতেও ব্যর্থ হয়।

তবে, নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্যাংকগুলোর আর্থিক চিত্র পরিবর্তন হতে শুরু করে। পূর্বেকার গভর্নর কর্তৃক দেওয়া বিভিন্ন সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ পায়। এরপর বেশ কিছু ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং কয়েকটি ব্যাংকের তারল্য সংকট আরও প্রকট হয়।

তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির আওতায় আন্তঃব্যাংক থেকে বিশেষ ধার সুবিধা চালু এবং নতুন টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করার পরে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোতে মোট আমানত ছিল ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা, যা অক্টোবর শেষে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৪ কোটিতে নেমে আসে। অর্থাৎ, এক মাসের ব্যবধানে আমানত কমেছে ২ হাজার ৬২১ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ইসলামি ব্যাংকিং শাখা ও উইন্ডোজগুলোতে আমানতের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। গত অক্টোবর মাসে এখানে ১ হাজার ২৯০ কোটি টাকা বেশি আমানত জমা হয়েছে।

আমানত কমলেও অক্টোবর মাসে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া, এই সময়ে আমদানি ও প্রবাসী আয় বাড়লেও রপ্তানি কিছুটা কমেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।