চট্টগ্রামে শিশুদের জীবন রক্ষাকারী টিকা পিসিভি ও পেন্টাভ্যালেন্টের অভাব দেখা দিয়েছে। প্রায় ১৫ দিন ধরে অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই টিকা পাওয়া যাচ্ছে না, ফলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের টিকা না দিয়েই ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে, আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে বিনামূল্যের র্যাবিস ভ্যাকসিনও প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অনুপস্থিত, যা রোগীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে।
পিসিভি ও পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা শিশুদের মারাত্মক রোগ যেমন হুপিং কাশি, ডিপথেরিয়া, ধনুষ্টংকার এবং নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা করে। শূন্য থেকে ১০ মাস বয়সী শিশুদের জন্য এই টিকাগুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে, বর্তমানে এই টিকাগুলির অভাবনীয় সংকট তৈরি হয়েছে, যার ফলে অনেক শিশু সময়মতো টিকা নিতে পারছে না।
অভিভাবকরা জানান, তারা প্রায়শই হাসপাতালে এসেও টিকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বেসরকারিভাবে এই টিকা নিতে গেলে প্রতি ডোজের জন্য পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা খরচ হয়, যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়।
চিকিৎসকেরা বলছেন, সময়মতো টিকা না পেলে শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় না, যার ফলে তারা সহজেই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. নুরুল হক বলেন, সময়মতো টিকা না দিলে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং তারা ভাইরাসের ঝুঁকিতে পড়ে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, টিকা সরবরাহে ঘাটতি থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। তবে, তিনি আশা করছেন শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলায় বছরে সাড়ে সাত লাখ পেন্টাভ্যালেন্ট টিকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু, সবশেষ ১৫ জানুয়ারি মাত্র ৪০ হাজার পেন্টাভ্যালেন্ট ও ১০ হাজার পিসিভি ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
অন্যদিকে, আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে বিনামূল্যে র্যাবিস ভ্যাকসিনও প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে, কুকুরে বা বিড়ালে কামড়ানো রোগীরা ভ্যাকসিন নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। তাদেরকে ফার্মেসী থেকে ভ্যাকসিন কিনে আনতে বলা হচ্ছে, যা অনেকের জন্য আর্থিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে বিনামূল্যের সিরিঞ্জও পাওয়া যাচ্ছে না, যা রোগীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, তারা রোগীদের অসহায়ত্বের কথা বুঝতে পারলেও, ভ্যাকসিন সরবরাহ না থাকায় তারা কিছু করতে পারছেন না। তারা জানান, এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, এবং দ্রুত ভ্যাকসিন সরবরাহের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল মান্নান জানান, ভ্যাকসিন শেষ হয়ে যাওয়ায় শনিবার থেকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া যাচ্ছে না। তবে, তিনি আশা করছেন, দ্রুত সরকারিভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
এই পরিস্থিতিতে, অনেক অভিভাবক এবং রোগী অসহায় বোধ করছেন। তারা সরকারের কাছে দ্রুত এই সংকট সমাধানের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।