রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

শেখ হাসিনাকে হত্যাই ছিলো ২১ আগস্ট হামলার প্রধান লক্ষ্য

প্রকাশিতঃ ১৫ নভেম্বর ২০১৭ | ৬:০৭ অপরাহ্ন

ঢাকা : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার লক্ষ্যই ছিলো আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করা।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সিনিয়র এডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আজ একাদশতম দিনের মতো যুক্ততর্ক শুনানিতে মামলার অন্যতম আসামী মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে শামীম ওরফে রাশেদ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম (কুষ্টিয়া), মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. আবু জাফর ও মাওলানা আবদুস সালামের ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির আলোকে এ তথ্য তুলে করেন।

এ পাচঁ আসামীর জবানবন্দি আজ রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্কে উপস্থাপন করেছে। জবানবন্দির আলোকে দেখা যায়, এদের মধ্যে আসামী মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে শামীম ওরফে রাশেদ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম (কুষ্টিয়া) সরাসরি গ্রেনেড হামলায় অংশ নেন। আসামী মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. আবু জাফর ২১ আগস্ট হামলার ঘটনার পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জড়িত। আসামী মাওলানা আবদুস সালাম ২১ আগস্ট হামলার ঘটনার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। মাওলানা আবদুস সালাম তার জবানবন্দিতে গ্রেনেড সরবরাহ, সরকার ও প্রশাসন পর্যায়ে ২১ আগস্ট হামলা নির্বিঘœ করতে কারা কারা সহযোগিতায় জড়িত বিভিন্ন সূত্রে তা প্রকাশ করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি নেতা ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু। তার সরকারি বাসভবন থেকে ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলো সরবরাহ করেন মাওলানা তাজউদ্দিন (পিন্টুর ভাই)। হামলা নির্বিঘœ করতে প্রশাসনিক সহায়তায় পিন্টুর বাসায় বৈঠকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের উপস্থিতির বিষয় তার জবানবন্দিতে তুলে ধরেন। এছাড়াও তৎকালীন ডিজিএফআই কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার প্রসঙ্গ তিনি তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন। এছাড়া আজ উপস্থাপিত অন্য চার আসামীর জবানবন্দিতে তারা জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সীসহ অন্য জঙ্গিদের সম্পৃক্তায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ঘটাতে পরিকল্পনা,বাস্তবায়ন বিষয় উল্লেখ রয়েছে।

২০০৪ সালের ২০ ও ২১ আগস্ট রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় জঙ্গি আহসানউল্লাহ কাজলের ভাড়া বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠক , হামলা বাস্তবায়নে কারা কিভাবে অংশ নিবে ও গ্রেনেড কিভাবে বিস্ফোরণ ঘটাতে হয় তার প্রস্তুতি সম্পর্কে আসামীদের জবানবন্দিতে উঠে আসে।

আজ উপস্থাপিত জবানবন্দিগুলোতে দেখা যায়, হামলা পরিকল্পনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোতে মুফতি হান্নানসহ জঙ্গি নেতারা শেখ হাসিনা হত্যার লক্ষ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশকে টার্গেট করেন। ওইদিন সেখানে শেখ হাসিনা বক্তৃতা করবেন। জঙ্গি কার্যক্রমে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার অন্যতম প্রতিবন্ধক উল্লেখ করে ২১ আগস্ট হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্য স্থির করে মুফতি হান্নানসহ অন্য জঙ্গিরা।

রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ আজ অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম আগামী ২০ নভেম্বর সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। আদালত আদেশে আজ বলেন, আগামী সপ্তাহে ২০ নভেম্বর সোমবার ও ২১ নভেম্বর মঙ্গলবার মামলার কার্যক্রম যথারীতি চলবে।

মুফতি হান্নানসহ ১২ আসামী এ মামলায় ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি পেশ করেছে। মুফতি হান্নানসহ , মাওলানা মঈনউদ্দিন ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ’র জবানবন্দী রাষ্ট্রপক্ষ ইতোপূর্বে যুক্তিতর্কে উপস্থাপন করেছে। আজ আরো পাঁচ আসামীর জবানবন্দি উপস্খাপন করা হয়।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫১১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দসহ ২২৫ জনের সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামীপক্ষেও ২০ জন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ এসব সাক্ষ্য জেরা করেছে।

২১ আগস্টের ওই নৃশংস হামলায় পৃথক দুটি মামলায় মোট আসামী ৫২ জন। মামলার আসামী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন। এ মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী, লে.কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং মামলার সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা- সিআইডি’র সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডি’র সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদসহ মোট ৮ জন জামিনে রয়েছেন। তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল (এলপিআর) এটিএম আমিন, লে.কর্নেল (অব:) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন এখনো পলাতক। এছাড়া ৩ জন আসামী জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুফতি হান্নান ও শরীফ সাইদুল আলম বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পলাতক আসামীদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী রয়েছেন।

প্রধান কৌঁসুলিকে যুক্তিতর্ক পেশে আরো সহায়তা করছেন আকরাম উদ্দিন শ্যামল, ফারহানা রেজা। আজ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। এছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী মো. আমিনুর রহমান, আবুল হাসনাত ও আশরাফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী আব্দুল সোবহান তরফদারসহ অন্যান্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গত ২৩ অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে।

বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পতœী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।