হাসান আরিফ বেঁচে থাকলে চট্টগ্রাম হতো দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী : মেয়র শাহাদাত


চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, “হাসান আরিফ স্যার না হলে হয়তো আজকে আমি মেয়র হিসেবে বসতে পারতাম না। পদে পদে আমার ফাইল আটকে যাওয়ার পর উপদেষ্টা হাসান আরিফ স্যারই প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমার ফাইল নিয়ে যান। এসময় তিনি বলেছিলেন, ‘শাহাদাতকে আমার লাগবে।’ এরপরই সিটি মেয়র হিসেবে আমার শপথ অনেকটা সহজ হয়। হাসান আরিফ স্যার বেঁচে থাকলে চট্টগ্রাম হত দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী।”

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে বাঁশখালী গার্লস ডিগ্রি কলেজ মাঠে খাঁন বাহাদুর ফাউন্ডেশন আয়োজিত সদ্য প্রয়াত অন্তবর্তীকালীন সরকারের ভূমি, বেসামরিক বিমান, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ. এফ হাসান আরিফের স্মরণে এক স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন উপরোক্ত কথাগুলো রাখেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক এমপি মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে উক্ত স্মরণসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ আমেরিকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম আদালতের সাবেক পিপি কফিল উদ্দিন চৌধুরী, খ্যাতিমান চিকিৎসক ডা. সৈয়দ মেজবাহুল হক, প্রয়াত হাসান আরিফের ছেলে অ্যাডভোকেট মুয়াজ আরিফ, হাসান আরিফের ব্যক্তিগত সহকারী অ্যাডভোকেট মো. আদীব চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক শাখাওয়াত জামাল দুলাল, বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামশেদুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জসিম উদ্দিন ও বাঁশখালী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম।

উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাস্টার লোকমান আহমদ, সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান চৌধুরী, অধ্যক্ষ বাঁশখালী গার্লস ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জমির উদ্দীন, বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম ইউনুস, সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সাবেক চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন, বাঁশখালী প্রেসক্লাব সভাপতি শফকত হোসাইন চাটগামী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র ডাক্তার শাহাদাত হোসেন বলেন, “হাসান আরিফ স্যারের সাথে আমার পরিচয় বেশিদিনের নয়। বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আইনজীবী হিসেবে আমি স্যার কে চিনতাম। আমাদের সাতকানিয়ার ব্যারিস্টার ওসমানের সাথে ওনার অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক ছিল। আমার মেয়র নির্বাচনের সময় ওসমান আমার সাথে সবসময় ছিল। সেখানে যত সমস্যা এই স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার করেছে, আমার মহিলা এজেন্টদের বের করে দিয়ে তাদেরকে লাঞ্ছিত করেছে সাংবাদিকদের সামনে। তখন ওসমান আমার পাশে ছিল। এই কথাগুলো ওনি হাসান আরিফ স্যারকে বুঝিয়েছেন।”

হাসান আরিফের স্মরণ শক্তি প্রখর ছিল, তাকে এই সময়ে দেশের খুব প্রয়োজন ছিল জানিয়ে ডা. শাহাদাত বলেন, “আমার সাথে স্যারের যেদিন প্রথম সাক্ষাৎ, তখন আমার মামলার রায়ও পাইনি। সেদিন দেখা করার সময় আমার মাথায় একটা ক্যাপ ছিল, আর গায়ে সুয়েটার ছিল। দেখা করার সময় তিনি ডেঙ্গু ও ওয়াসা নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিলেন। মেয়র হওয়ার পর আমি ওনার সাথে দ্বিতীয় বার দেখা করি। তখন তিনি বলেন, ‘তোমার মাথায় ক্যাপ আর গায়ে সুয়েটার ছিল না প্রথম বার দেখা করার সময়?’ আমি তখন চুপ থাকলাম। আমি অনেকটা বিস্মিত হয়েছিলাম। কীভাবে এই বয়সে এক মাস আগে আমি কোন ড্রেস পরেছিলাম, সেটি মাথায় রাখলেন। আমরা তো দু’দিন আগে অর্থাৎ পরশু কি পরেছি, তা ভুলে যাই। ওনার স্মরণ শক্তি খুব প্রখর ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “স্যার অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। হাসান আরিফ স্যার না থাকলে আজকে আমি মেয়র হতে পারতাম না। স্যারের কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ। সবাই স্যারের জন্য দোয়া করবেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আমি ওনার জন্য বড় একটি স্মরণসভা করবো৷ সে জন্য প্রস্তুতিও চলছে। তিনি জীবিত থাকলে চট্টগ্রাম হতো দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী।”

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক এমপি মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “হাসান আরিফ আমার প্রিয় একজন বন্ধু ছিলেন। তাকে দিয়ে বাঁশখালীর অনেক উন্নয়ন করেছি। তিনি বাঁশখালীর বহু মানুষের উপকার করেছেন।”