সম্ভাবনাময় মাশরুম চাষে বাংলাদেশ দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং সুস্বাদু এই সবজিটি দেশের ৬৪ জেলার প্রতিটি উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার মেট্রিকটন মাশরুম উৎপাদিত হচ্ছে এবং প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
চট্টগ্রামের পটিয়ার পাইকপাড়ার নাজিম উদ্দিন জানান, তিনি কয়েক বছর ধরে মাশরুম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তার উৎপাদিত মাশরুম প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।
রান্না করা মাশরুম মাংসের মত সুস্বাদু এবং শুকনো মাশরুমও বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাশরুম দাঁত ও হাড়ের গঠন, রক্তশূন্যতা, বেরিবেরি, হৃদরোগ প্রতিরোধ এবং বহুমূত্র রোগের চিকিৎসায় বিশেষভাবে কার্যকর।
প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমে ২৫ গ্রাম প্রোটিনসহ ভিটামিন বি, সি, বি কমপ্লেক্স, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, খনিজ পদার্থ, আমিষ, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড ও এনজাইম রয়েছে।
মাশরুমে ইরিটাডেনিন ও ল্যাম্পট্রল নামে রাসায়নিক পদার্থ হূদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, পেটের পীড়া ও রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধ, টিউমার বৃদ্ধি রোধ এবং হাড় ও দাঁত গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণে ৯৬.৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্প পরিচালক ড. আখতার জাহান কাঁকন জানান, চট্টগ্রামসহ ৬৩ জেলার ১৬০ টি উপজেলায় এবং প্রতিটি জেলা সদরে এই প্রকল্পের কাজ চলছে।
পটিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কল্পনা রহমান জানান, তার উপজেলায় ৩০ জনের বেশি উদ্যোক্তা মাশরুম চাষ শুরু করেছেন।
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আজাদ হোসেন জানান, তার উপজেলায় তিনজন উদ্যোক্তা মাশরুম চাষ করছেন।
বাংলাদেশ মাশরুম উন্নয়ন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ ফেরদৌস আহমেদ জানান, ১৯৮০ দশকে হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে দেশে মাশরুম চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বর্তমানে দেশে প্রতিবছর ৪২ হাজার মেট্রিকটন মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে।
ইতোমধ্যে ৯টি উন্নত জাত অবমুক্ত করা হয়েছে এবং আরো বেশ কিছু জাত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উন্নত প্রশিক্ষণ ও প্রচার প্রচারণা বৃদ্ধি পেলে মাশরুম চাষ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি জানান।
ড. ফেরদৌস আরও বলেন, দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার যুবক রয়েছে। তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা করতে পারলে মাশরুমের স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি হবে।