চাষাবাদে খরচ বেশি, লাভ কম: আগ্রহ হারাচ্ছেন হাটহাজারীর কৃষকরা


হাটহাজারী প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় গত কয়েক বছর ধরে সাত হাজার হেক্টরের অধিক আবাদযোগ্য কৃষি জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে। যা এ অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে হাটহাজারী পৌরসভা সদরের ফটিকা বিল, গুমানমর্দ্দন বিল, গড়দুয়ারা এলাকা, মাদার্শা বিল এবং আমানত আলী সড়কের পাশের বিলের বিস্তীর্ণ এলাকা বছরের পর বছর ধরে অনাবাদি পড়ে আছে। এসব শস্য ক্ষেত এখন আগাছায় পরিপূর্ণ। ভূমি দস্যু ও বেপারিরা নিয়ম বহির্ভূতভাবে এসব জমি ভরাট করে প্লট বানিয়ে ধ্বংস করছে উর্বর কৃষি জমি।

হাটহাজারী উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এ উপজেলায় স্থায়ী পতিত জমির পরিমাণ ১০৪০ হেক্টর এবং সাময়িক পতিত জমির পরিমাণ ৬৫০ হেক্টর। কিন্তু গত বছর উপজেলা কৃষি অফিসার মো.আল-মামুন শিকদার জানিয়েছিলেন, হাটহাজারীতে স্থায়ী পতিত জমি ৬৪৯৬ হেক্টর ও আবাদযোগ্য পতিত জমি ৬২০ হেক্টর। এই তথ্যের অসঙ্গতি প্রকৃত চিত্র আড়াল করছে বলে মনে করছেন অনেকে।

এলাকাবাসী ও স্থানীয়দের মতে, কৃষি জমি অনাবাদি থাকার প্রধান কারণ অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ। এছাড়াও বিভিন্ন রাস্তায় সরু কালভার্ট নির্মাণের ফলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, যা কৃষি জমিকে পতিত জমিতে পরিণত করছে। পানিসেচ ও নিকাশের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকা এবং প্রবাসীদের জমি নিজেরা চাষ না করা বা কাউকে বর্গা বা লীজ না দেওয়াও এর জন্য দায়ী।

সচেতন মহল মনে করেন, ফরহাদাবাদের মন্দাকিনী থেকে এনায়েতপুর পর্যন্ত খাল কেটে হালদা প্যারালাল খালের সাথে সংযোগ করে দেওয়া এবং আধা বা ১ কিলোমিটার পরপর স্লুইচ গেট দিয়ে পানি সংরক্ষণ করলে চাষাবাদের সমস্যা অনেকাংশে সমাধান হবে।

চাষি মহিন উদ্দীন, লোকমান, কামালসহ আরও অনেকে জানান, চাষাবাদে খরচ অনেক বেশি হলেও আশানুরূপ আয় হয় না। যার ফলে তারা চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণের কারণে পানিসেচ ও নিকাশে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে বৃষ্টি হলেই ক্ষেতের ফসল পানিতে ডুবে পঁচে যায়।

উপজেলার ভানজইন বিলের জমি মালিক মো.কুতুব উদ্দিন বলেন, চাষিদের বর্গা চাষের কথা বললেও তারা হাল চাষের গরু, কলের লাঙ্গল ও শ্রমিকের অভাবের কথা বলে। শ্রমিকদের দিন হাজিরা বেশি দিতে হয় বলে তাদের লাভ থাকে না।

শাহজাহান নামের আরেক জমির মালিক বলেন, চাষিদের পিছে ঘুরে কোনো ফল না হওয়ায় জমি অনাবাদি হয়ে যাচ্ছে।