হালদার চরে সবুজের বিপ্লব, সবজি চাষে ভাগ্যবদল


এস এম আক্কাছ, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদীর বুকে জেগে উঠেছে পাঁচটি বড় চর। নাজিরহাট, কুম্ভারপাড়া, ধুরুং, নাইচ্যারঘাট ও ব্রাহ্মণহাট। এসব চরে এখন কোটি টাকার সবজি চাষে ভরে গেছে। নদীপারের হাজারো কৃষকের মুখে ফুটেছে আনন্দের হাসি।

১৯৯১ সালের আগে এসব চরগুলোতে জনবসতি ছিল। বিভিন্ন সময়ে বন্যায় হালদার ভাঙনে এসব বিলীন হয়। ভাঙাগড়ায় এসব এলাকায় ক্রমাগত চর জেগে উঠে। বসত-ভিটি হারিয়ে একসময় যারা নিঃস্ব হয়েছিলেন, দীর্ঘদিন পর জেগে ওঠা ওই চরগুলো তাদের এখন আশার সম্বল। দেড় দশক ধরে এসব চরে সবজি আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অন্তত কয়েক হাজার পরিবার।

নাজিরহাট পৌরসভার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ শরীফ উদ্দিন জানান, চরের প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ১০ টন সবজি উৎপাদিত হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় দুই লক্ষ টাকা। সে হিসেবে ১৫০ হেক্টর জমিতে দেড় হাজার টন সবজি উৎপাদিত হয়। যার বাজার মূল্য তিন কোটি টাকারও বেশি।

তিনি আরো জানান, ‘প্রতিবছর বন্যায় হালদার অনেক জমি ঢলে তলিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে এতে কিছু স্থানে প্রচুর পলি জমে। পলিযুক্ত দো-আঁশ মাটি সবজি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এতে কৃষক বেশ লাভবান হয়, ফলও ভাল জন্মে। আমরাও কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকের উপকারের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

কুম্ভারপাড়া গ্রামের কৃষক মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন জানান, চরে সবজি চাষে খরচ খুবই কম। সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকেরা সবজি চাষে বেশি বিনিয়োগ করেন। সবজি হিসেবে ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, মুলা, বরবটি, বেগুন, শিম, টমেটো, পেঁয়াজ, মরিচ ও ধনেপাতার চাষ হয়।

ধুরুং এলাকার কৃষক আবদুল করিম জানান, প্রতি হেক্টরে ৩০ কেজি ইউরিয়া, ২০ কেজি ফসফেট এবং ৫ কেজি নাইট্রোজেন সার দিতে হয়। অনেকে জৈবসার মিশিয়ে জমিতে বীজ বপন করেন।

নাইচ্যারঘাট এলাকার উপকারভোগী মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, ১ একর জমিতে ১৩০ মণ সবজি পেয়েছেন। যার বাজার মূল্য দেড় লক্ষ টাকা। জমিতে তেমন সার প্রয়োগ করতে হয়নি। আরো প্রচুর সবজি পাবেন বলে আশা তার। এখানকার সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারেও সরবরাহ করা হচ্ছে।

নাজিরহাট বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. শাহাব উদ্দিন জানান, প্রতি সপ্তাহে কুম্ভারপাড়া এলাকা থেকে তিনি প্রায় এক-দেড় লাখ টাকার সবজি কিনে বাজারে বিক্রি করেন। এতে আশার চেয়ে বেশ লাভও হয় তার।

আশাবাদী চরগাঁওপাড়া গ্রামের মুহাম্মদ আজিম উদ্দিন বলেন, হালদার চরে আমার এক একর জমি রয়েছে। এতে বেগুনের চাষ করেছি। প্রতি সপ্তাহে ৪-৫ মণ বেগুন পাই। এতে তার আয় হয় ৫-৬ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত লাখ টাকার বিক্রি করেছি। আরও আয় হবে।

দৌলতপুর এলাকার মোহাম্মদ আইয়ুব আলী বলেন, একসময় কাজ ছিল না। এখন কাজের অভাব নেই। বরং এলাকার অনেক বেকারেরা কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। পাশের গ্রামের অনেকে সবজিক্ষেতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এটি বড় আশার খবর।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, হালদার চরে ১৫০ হেক্টর সবজি চাষে বিপুল সবজি উৎপাদিত হয়েছে। এলাকার কৃষকদের ভাগ্য বদলের জন্য কৃষি কার্যালয় থেকে প্রযুক্তিগত সকল প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রোগ বালাই প্রতিরোধে এলাকার কৃষকরা অনেক সচেতন। লাভবানও হচ্ছেন তারা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার কৃষিবান্ধব। তাদের প্রয়োজনে কৃষিঋণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা রয়েছে।