ঢাকা : আমনের ভরা মৌসুমেও দেশের চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কৃষকের মাঠ থেকে নতুন ধান উঠে আসা এবং সরকারি উদ্যোগে আমদানি বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও চালের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পেছনে মূলত মিল মালিকদের অসাধু কারসাজিকে দায়ী করা হচ্ছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও মিল পর্যায়ে ৫০ কেজি ওজনের চালের বস্তাপ্রতি দাম ৭০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। মিনিকেট চালের দাম বেড়ে ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার টাকায় পৌঁছেছে, যা এক মাস আগেও ছিল ৩ হাজার ৩০০ টাকা। একইভাবে, ভালো মানের নাজিরশাইল চালের দাম ৩ হাজার ৯০০ টাকা থেকে বেড়ে ৪ হাজার ৩০০ টাকা হয়েছে।
এই দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারেও। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মিল থেকে চালের দাম বেশি হওয়ায় তাদেরও বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হচ্ছে। ফলে খুচরা বাজারে এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি সরু চালের দাম ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৮৫ টাকায় পৌঁছেছে। মাঝারি ও মোটা চালের দামও ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মিল মালিকরা ধানের দাম বৃদ্ধির কথা বলছেন। তাদের দাবি, বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে ধানের উৎপাদন কম হয়েছে, যার ফলে ধানের দাম বেড়েছে। এছাড়াও, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ধান মজুত করে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার নভেম্বর মাসে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছিল। কিন্তু মিল মালিকদের অসাধু কারসাজির কারণে এই উদ্যোগ কার্যকর হয়নি। বুধবার বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন চালের দাম বৃদ্ধির জন্য সাময়িক মজুতদারিকে দায়ী করেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুত আছে এবং বাজার তদারকির মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, তারা নিয়মিত বাজার তদারকি করছে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোর মতে, কেবল তদারকি যথেষ্ট নয়, বাজার ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। অন্যথায়, আসন্ন রমজান মাসে চালের দাম আরও বেড়ে ভোক্তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া খবরে চালের দাম বৃদ্ধির চিত্র উঠে এসেছে। সর্বত্রই ভোক্তারা চালের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
চালের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বাজার ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করে বলেন, বাজার তদারকিতে ব্যর্থতার কারণেই অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ পাচ্ছে।