সনাতন পদ্ধতি হারিয়ে যাচ্ছে: কারখানায় তৈরি হচ্ছে ক্ষতিকর মুড়ি


দক্ষিণ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : দেশে বছরজুড়ে ধনী-গরীব সকলের কাছেই মুড়ি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। পবিত্র রমজানে তো মুড়ি ছাড়া ইফতার যেন জমেই না। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশব্যাপী কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিগত প্রায় ২০-২২ বছর ধরে মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ইউরিয়া সার ও সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড (হাইড্রোজ) দিয়ে মুড়ি, মুড়ির মোয়া ও খই তৈরি করছে। চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশে কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই তারা এগুলো বাজারজাত করে আসছে। এইভাবে বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি মুড়ি বা মুড়ির মোয়া বা খই খাওয়ার ফলে ধীরে ধীরে চট্টগ্রামসহ দেশের কোটি কোটি মানুষের জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে।

সার ও কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি মুড়ি দেখতে সুন্দর, ধবধবে সাদা ও মোটা হওয়ায় এর চাহিদাও প্রচুর। দেশব্যাপী বিশেষভাবে কেমিক্যাল মিশ্রিত করে মুড়ি ও মুড়ির মোয়া বা খই তৈরির শত শত কারখানা গড়ে উঠেছে। ওই সকল কারখানায় কোনো রকম বাধা ছাড়াই তৈরি হওয়া মুড়ি, খই ও মুড়ির মোয়া খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফলে স্থানীয় সনাতন পদ্ধতিতে মুড়ি তৈরির সাথে জড়িত হাজার হাজার পরিবার এখন মুড়ি বিক্রি করতে না পেরে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে এবং তারা পুরোনো পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।

বছরের পর বছর ধরে জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ইউরিয়া ও হাইড্রোজ দিয়ে তৈরি মুড়ি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি হলেও বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরে পড়ছে না। জনস্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করে অসাধু ব্যক্তিরা প্রশাসনকে ধোঁকা দিয়ে এই পদ্ধতিতে মুড়ি, মুড়ির মোয়া ও খই উৎপাদন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খোলা বাজারের মুড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছাড়াও চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশে বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী মহল জনস্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মুড়ি তৈরির কারখানা স্থাপন করে অবৈধভাবে লাখ লাখ টন মুড়ি উৎপাদন করে বাজারজাত করছে।

দীর্ঘদিন ধরে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ ইউরিয়া সার ও হাইড্রোজ দিয়ে তৈরি মুড়ি বাজারে আসায় দেশীয় তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত মুড়ি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী এলাকার মুড়ি ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা প্রায় ৩০-৪০ বছর ধরে মুড়ি বিক্রি করে আসছেন। আগে তারা দেশীয় মুড়ি বিক্রি করতেন। হঠাৎ করে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি মুড়ি আসায় ক্রেতারা দেশীয় মুড়ির চেয়ে এই মুড়ির প্রতি ঝুঁকে পড়েছে বেশি। বর্তমানে ১ কেজি মুড়ি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বায়োকেমিস্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরিয়া ও কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি মুড়ি খাওয়া মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব মুড়ি দীর্ঘদিন ধরে খেলে কিডনি ও ব্রেইনের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজির অধ্যাপক ড. আতিয়ার রহমান বলেন, হাইড্রোসালফাইড ও ইউরিয়া দিয়ে মুড়ি মোটা ও সাদা করা হয়। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

তিনি বলেন, সব বয়সের প্রায় সকলেই কম-বেশি মুড়ি খেয়ে থাকেন। বিশেষ করে পবিত্র রমজানে মুড়ির চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি মুড়ি খাওয়ার ফলে তা পাকস্থলীতে পৌঁছে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ সব খাবার গ্রহণের কারণে শরীরে নাইট্রোজেন অক্সিজেনে প্রতিক্রিয়াশীল উপাদান তৈরি হয়। ফলে মানবদেহের জিন পরিবর্তন হয়ে যায়। পাশাপাশি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসে। ডায়াবেটিস হয় এবং লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।