রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

কালুরঘাট-মনসারটেক মহাসড়ক উন্নীতকরণে ধীরগতি: গাড়ির চাপে জনদুর্ভোগ

প্রকাশিতঃ ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৮:৪৩ পূর্বাহ্ন


এস এম রহমান, দক্ষিণ চট্টগ্রাম : প্রাচীনতম কালুরঘাট-মনসারটেক মহাসড়ক উন্নীতকরণে ধীরগতির কারণে এই মহাসড়কে ভারী যানবাহন চলাচল ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির সাথে সাথে মহাসড়কে গাড়ির চাপ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।

জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ২০২২ সালে ১০.৫৪২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই মহাসড়কটিকে ৫.৫ মিটার থেকে ১০.৩ মিটারে উন্নীত করার জন্য একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩৩ কোটি টাকা।

কালুরঘাট রেলওয়ে সেতু থেকে পটিয়া মনসারটেক পর্যন্ত এই মহাসড়কটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া-মনসা বাদামতল এলাকায় মিলিত হয়েছে। কর্ণফুলী টানেল চালুর পর এই মহাসড়কের গুরুত্ব বেড়েছে। এই জাতীয় মহাসড়কের রাইখালী খালের ওপর একটি সেতুসহ নতুনভাবে আরও সাতটি বক্স কালভার্ট নির্মাণের কথা ছিল ওই প্রকল্পে।

দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলওয়ে লাইন স্থাপনসহ হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার ও কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর, কোল পাওয়ার প্লান্ট এবং বিশাল শিল্প জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব কারণে এই মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়েই চলেছে।

এ কারণেই সওজ কর্তৃপক্ষ এই মহাসড়কটিকে প্রশস্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের অধিকাংশ অংশ ইতিমধ্যে প্রশস্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মহাসড়কের পটিয়া ও চন্দনাইশে তিনটি এবং চকরিয়ায় একটি ফোরলেন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একটি ফ্লাইওভার ও চারটি বাইপাস নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। জাইকার অধীনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে ফোরলেন অথবা ছয় লেনে উন্নীত করার জন্য নতুনভাবে সমীক্ষা চলছে।

কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়কের সাথে সঙ্গতি রেখে যানবাহনের চাপ নিয়ন্ত্রণে আনোয়ারা ওয়াই জংশন থেকে কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত ৮.১০ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেনে এবং কালাবিবির দীঘি থেকে আনোয়ারা ফায়ার স্টেশন পর্যন্ত ২.৪ কিলোমিটার সড়ক ৫.৫ মিটার থেকে ৭.৩ মিটারে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

জানা গেছে, কালুরঘাট-মনসারটেক (এন-১০৭) জাতীয় মহাসড়ক উন্নীতকরণের জন্য ২৩২.৯৭০৬ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের এডিপিতে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্প অনুযায়ী জাতীয় মহাসড়কটি কালুরঘাট সেতু থেকে মনসারটেক বাদামতল নামক স্থানে এন-১ জাতীয় মহাসড়কের সাথে মিলিত হবে। এটি চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণাঞ্চল ও পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডোর হিসেবে কাজ করবে।

মহাসড়কটির উভয় পাশে অসংখ্য ছোট-বড় শিল্প-কারখানা ও গার্মেন্টস অবস্থিত। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শিল্প-কারখানার পণ্যবাহী যানবাহন এবং পটিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও কক্সবাজার জেলার জনসাধারণ চলাচল করেন।

কর্ণফুলী নদীতে কালুরঘাট অংশে সড়ক-কাম-রেল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এটি চট্টগ্রাম শহরের সাথে বোয়ালখালী উপজেলার যোগাযোগ সহজ করবে। ফলে প্রস্তাবিত সড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের (এন-১) সংযোগ সড়ক হিসেবে কাজ করবে। কালুরঘাট সেতু নির্মাণ শেষ হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবান গামী যানবাহন এই সড়ক ব্যবহার করে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করবে।

বর্তমানে সড়কটি ১৮ ফুট (৫.৫ মিটার) প্রশস্ত হওয়ায় নিত্যদিন যানজট হয়। এতে মানুষ এবং পণ্যবাহী যানবাহন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা জানান, বর্তমানে প্রকল্পের পরিবেশগত ছাড়পত্র নেওয়ার কাজ চলছে।