রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত

প্রকাশিতঃ ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

bnp jamaat
একুশে ডেস্ক : দেশের দুই বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। দুটো দলই আশা করছে, সরকারের ন্যূনতম সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর দ্রুততম সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা হবে। ইতোমধ্যেই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নেতারা দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে মাঠে নেমেছেন।

বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, তাদের দল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেনি, তবে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের নির্বাচনি এলাকায় জনসংযোগ ও সমাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলের ইতিহাস, আন্দোলনে সক্রিয়তা এবং ছাত্রদল থেকে উঠে আসা নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। তবে, নির্বাচনে দল এককভাবে যাবে না, জোটবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করবে কিনা, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “নির্বাচনমুখী দল হিসেবে সবসময়ই আমাদের প্রস্তুতি থাকে এবং সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।” তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের প্রস্তুতি সবসময় ছিল এবং এখনো রয়েছে। তবে কিছু বিষয় আপডেট হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করছি।”

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, “ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা সারা দেশে ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা পৌঁছাচ্ছি। দল ক্ষমতায় এলে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে এবং সব দলের সহযোগিতা নিয়ে দেশ পরিচালিত হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “এটি নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিবেচনায় থাকবে।”

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, “ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। নির্বাচনে তার নেতৃত্বে আমাদের প্রস্তুতি তুঙ্গে।”

ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপি নেতা আমিনুল হক বলেন, “আমরা জনগণকে একটি শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও প্রতিহিংসামুক্ত রাজনীতির পরিবেশ উপহার দিতে চাই। আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে যা ঘটেছে, তা পরিবর্তন করতে চাই।”

জামায়াতে ইসলামী: দুই ধরনের প্রস্তুতি

এদিকে জামায়াতে ইসলামীও তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, তারা দুই ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। প্রথমত, জামায়াত তাদের নিজস্ব দলীয় প্রার্থী ৩০০ আসনে দিতে চায়। দ্বিতীয়ত, পরিস্থিতি বুঝে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন, এককভাবে না কি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিবেন।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার। তবে নির্বাচনের সময় যে পরিস্থিতি থাকবে, তার ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিবো।”

জামায়াতের নেতারা জানিয়েছেন, তারা এখন থেকে সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমত তৈরির চেষ্টা করছে। জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চলছে। তারা নিজেরাই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, পাশাপাশি ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের উদ্যোগও চলছে।

জামায়াতের এক নেতা বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করা উচিত। আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি এবং ২০০ আসনে প্রার্থীদের নামও প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে।”

সরকারের অবস্থান

সরকারও জানিয়েছে, ন্যূনতম সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর দ্রুততম সময়ে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, “জরুরি সংস্কারের পর সরকার দ্রুত নির্বাচন দিবে। তবে, নির্বাচনের তারিখ সব রাজনৈতিক দল এবং অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করা হবে।”

তারা জানান, সরকার বর্তমানে নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। এই সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে—সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম, শ্রমিক অধিকার, নারীবিষয়ক বিষয়ক এবং স্থানীয় সরকার। এই সংস্কার সংক্রান্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং ৯০ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন প্রদান করার কথা রয়েছে।

জাতীয় ঐক্য গঠনের আহ্বান

এছাড়া, বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা গত কয়েকদিনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তারা দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতীয় ঐক্য গঠনের জন্য সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করতে আহ্বান জানান। দুই দলই সরকারের ন্যূনতম সংস্কারের পর দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করার তাগিদ দিয়েছেন। জামায়াতের নেতারা বলেন, “নির্বাচন আগে হওয়ার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত করা দরকার।”

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, “তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আগামী নির্বাচনে জয়ী হবে এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করবে।” জামায়াতের নেতারা জানিয়েছেন, তারা নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে তাদের বার্তা পৌঁছানোর কাজও করছেন।

এদিকে, বিএনপির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দলের জন্য নির্বাচনের প্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা সবসময়ই এই প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছেন। বিএনপির একজন নেতা বলেন, “এটি আমাদের নির্বাচনের প্রাক প্রস্তুতির অংশ, যা আমাদের নির্বাচনে সাফল্য আনবে।”

এভাবে, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াত তাদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে কাজ করছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তারা নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ, উন্নত ও স্বচ্ছ বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ নিবেন। সব দলই আশা করছে যে, দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এ নিয়ে সরকার, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে।