রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি সরানো নিয়ে বক্তব্যের জন্য রিজভীর দুঃখ প্রকাশ

প্রকাশিতঃ ১২ নভেম্বর ২০২৪ | ১১:৫০ অপরাহ্ন


ঢাকা : বঙ্গভবন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে রিজভী এই দুঃখ প্রকাশ করেন। রিজভীর বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন।

আজ সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও রক্তদান কর্মসূচির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রিজভী। বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে শেখ মুজিবের ছবি সরানোর প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন তিনি। রিজভী বলেছিলেন, তিনি মনে করেন, তাঁর (শেখ মুজিবুর রহমান) ছবি নামিয়ে ফেলা উচিত হয়নি। খন্দকার মোশতাক ছবি নামিয়েছিলেন, জিয়াউর রহমান তুলেছিলেন।

রিজভী আরও বলেছিলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক শেখ মুজিবের ছবি নামিয়ে নিল। জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় এলেন। জিয়াউর রহমান কিন্তু বঙ্গভবনে শেখ মুজিবের ছবি ফিরিয়ে আনেন।’

এই বক্তব্যের সংশোধনী দিয়ে পরে বিবৃতি দেন রিজভী। তিনি বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে তাঁর দেওয়া বক্তব্য ধরে ‘বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি সরানো উচিত হয়নি’ শীর্ষক একটি সংবাদ অনলাইনে প্রকাশিত হচ্ছে। আজ গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামানো হয়েছে’ শীর্ষক একটি সংবাদের প্রতি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। তিনি মনে করেছিলেন, বঙ্গভবনের দরবার কক্ষে যেখানে সব রাষ্ট্রপতির ছবি থাকে, সেখান থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামানো হয়েছে। মূলত ছবিটি সরানো হয়েছিল বঙ্গভবনের অন্য একটি অফিস কক্ষ থেকে।

রিজভী তাঁর বিবৃতিতে বলেন, ‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে শেখ মুজিবের ছবি রাখার বাধ্যতামূলক আইন করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদী আইনের কোনো কার্যকারিতা থাকতে পারে না। অফিস-আদালত সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয়। অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্যের জন্য আমি দুঃখিত।’

বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হয়েছে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম গতকাল সোমবার তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে জানিয়েছিলেন।

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও রক্তদান কর্মসূচির অনুষ্ঠানে রিজভী আরও বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল কায়েম করেছিলেন, স্বাধীনতার পর সব দল নিষিদ্ধ করেছিলেন। গণতন্ত্র হত্যার ধারা তাঁর হাত দিয়ে এসেছে। এর আগে তিনি’ ৬০-এর দশকে স্বাধিকারের আন্দোলন করেছিলেন। মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করেছিল, ’ ৭০-এ তাঁকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু তাঁর অঙ্গীকার তিনি রক্ষা করতে পারেননি। স্বাধীনতাযুদ্ধে তিনি কোনো ভূমিকা রাখেননি। স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে স্বাধিকার আন্দোলনে তাঁর কিছুটা ভূমিকার কথা জনগণ মনে রেখেছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের ঘোষণা তো দিয়েছেন অদম্য সাহসী মেজর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।’

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাঁদের এক বিন্দু অবদান নেই, তাঁরা অনেকে উপদেষ্টা-সচিব হয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছেন। রক্তের ঋণে আবদ্ধ এই অন্তর্বর্তী সরকার। আজকে যাঁরা সচিব হয়েছেন, তাঁদের কিন্তু কোনো অবদান নেই। যিনি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হয়েছেন, তাঁর কিন্তু কোনো অবদান নেই। অবদান তাঁদের রয়েছে, যাঁরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন জুলাই-আগস্টে। এর আগে বিএনপি আন্দোলনের পটভূমি রচনা করেছিল। এ পটভূমি রচনা করতে গিয়ে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীর জীবন চলে গেছে। অনেকে হারিয়ে গেছেন।’

রিজভী বলেন, বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী, হুমায়ুন পারভেজ, সাইফুল ইসলাম হিরু, জাকির, জনি—যাঁরা গুম হয়েছেন, ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন, তাঁদের অবদান রয়েছে। এতে স্বাস্থ্যসচিবের অবদান নেই। আজকের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার অবদান নেই। কিন্তু তাঁরা দেখেছেন, এই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অত্যন্ত বিমাতাসুলভ আচরণ করছে জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে। তিনি (রিজভী) অত্যন্ত মর্মাহত হন, যখন শোনেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্যসচিব ড্যাবের বরেণ্য চিকিৎসকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘এই যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কত ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে, এখনো হাসপাতালে অনেক ছেলে কাতরাচ্ছে, আপনারা কয়জন দেখতে গিয়েছেন? আপনারা আবার অহংকার করেন। আমরা আপনাদের চিনে রাখছি। আপনারা কারা, আপনারা শেখ হাসিনার দোসর।’

অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফরহাদ হালিম, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।