রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

ট্রাম্পের অসাধারণ প্রত্যাবর্তন

প্রকাশিতঃ ৬ নভেম্বর ২০২৪ | ৬:০৭ অপরাহ্ন


একুশে প্রতিবেদক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৮ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এক মেয়াদের বিরতিতে দ্বিতীয় বারের মতো হোয়াইট হাউসের মসনদে ফিরলেন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের আগের জনমত জরিপের সব হিসাব উল্টে দিয়ে মঙ্গলবার মার্কিনিরা আরেকবার বেছে নিলেন সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে। এভাবে ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমালা হ্যারিসের উত্থানের আশায় গুঁড়েবালি দেখল বিশ্ব এবং ট্রাম্প নতুন ইতিহাস গড়লেন।

নির্বাচনের আগে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কথার লড়াই ও বিভাজনের রাজনীতিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। গণমাধ্যম ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই জানান দেয় যে, এই দুই প্রার্থীর মাঝে হতে যাচ্ছে তুমুল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। যদিও বেশিরভাগ জরিপে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী কমালাকেই এগিয়ে রাখা হয়েছিল, কিন্তু মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে “আমেরিকা প্রথম” নীতিতে অটল ট্রাম্পকেই বেছে নিলেন মার্কিন ভোটাররা।

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে প্রকাশিত নির্বাচনী ফল অনুযায়ী, মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন ২৭০টির। বুধবার বাংলাদেশ সময় পৌনে ৪টার দিকে ট্রাম্প এই ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছান। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা, মেইন, পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্পের বিজয়ের ফলে তাঁর হোয়াইট হাউসে ফেরার পথ প্রশস্ত হয়।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, চার বছর আগে ভোটে হেরে হোয়াইট হাউস ত্যাগের পর ট্রাম্প আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর এই অসাধারণ প্রত্যাবর্তনে নতুন আমেরিকান নেতৃত্বের সূচনা হতে যাচ্ছে। ট্রাম্পের নেতৃত্বে দেশটির গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান ও পররাষ্ট্র সম্পর্ক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারে।

বৈশ্বিক গবেষণা সংস্থা এডিসন রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প ২৭০টিরও বেশি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়ে হোয়াইট হাউস পুনরুদ্ধার করেছেন, যা দেশটিতে চলমান মেরুকরণের রাজনীতিকে আরও গভীর করে তুলেছে। স্থানীয় সময় বুধবার সকালে উইসকনসিনের ফল প্রকাশের সাথে সাথে ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।

মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) জানিয়েছে, ট্রাম্প ২৭৯টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন, আর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কমালা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৩টি ভোট। তবে এখনও কিছু রাজ্যে আংশিক ভোট গণনা বাকি রয়েছে।

প্রথমে ট্রাম্প পপুলার ভোটেও প্রায় ৫০ লাখের বেশি ভোট পেয়েছেন। ফ্লোরিডার পাম বিচ কাউন্টি কনভেনশন সেন্টারে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “আমেরিকা আমাদের এক অভূতপূর্ব ও শক্তিশালী ম্যান্ডেট দিয়েছে।”

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেওয়ার জন্য পরবর্তী বছরের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটল ভবনে তাণ্ডব চালান ট্রাম্পের সমর্থকরা। ওই ঘটনার পর ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে বলেই অনেকে মনে করেছিলেন। কিন্তু তিনি সেই বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে নিজের দলের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্বাচনী দৌড় থেকে দূরে সরিয়ে দেন।

মার্কিন অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীনতায় ভোটারদের উদ্বেগকে পুঁজি করে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিসের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। অপরদিকে কমালা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রকে অভিবাসীদের জন্য স্বর্গরাজ্যে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দেন।

ভোটের পর বুধবার হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সমর্থকদের নিয়ে ইলেকশন নাইট পার্টিতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল কমালা হ্যারিসের, কিন্তু নির্বাচনের ফল বিপর্যয়ের আভাস মেলায় তিনি সেখানে যাননি। সেখানে খালি চেয়ার আর জনশূন্য মঞ্চ দেখা যায়। তবে হ্যারিসের নির্বাচনী প্রচার শিবিরের কো-চেয়ারম্যান সেড্রিক রিচমন্ড মধ্যরাতের পর জনতার উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেন এবং বলেন, বুধবারের যেকোনো এক সময় জনসম্মুখে কথা বলবেন কমালা হ্যারিস।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ট্রাম্পের এই জয়ের ফলে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হল, যা দেশের ভবিষ্যৎকে নতুনভাবে নির্ধারণ করতে পারে।