নগরপিতা নয়, নগরসেবক হয়ে চট্টগ্রামবাসীর পাশে থাকতে চান ডা. শাহাদাত


চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম, দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত এই সমুদ্রতীরবর্তী শহর। এখানেই কোটি মানুষের স্বপ্ন, আশার ভরসা। আর এই শহরের দায়িত্ব নিতে এবার হাজির হয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি শুধুমাত্র একজন নগরপিতা নন, বরং নিজেকে নগরবাসীর একজন নিবেদিত সেবক হিসেবে পরিচয় দিয়ে সবাইকে আবেগাপ্লুত করলেন। দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই তিনি দলীয় নেতা-কর্মী ও নগরবাসীর প্রতি আন্তরিক সহযোগিতার আহ্বান জানান এবং এ শহরের উন্নয়নে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে পুরাতন রেলওয়ে স্টেশনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সাধারণ নাগরিকের উপস্থিতিতে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমি এই ৭০ লক্ষ মানুষের জন্য নগরপিতা হিসেবে নয়, নগরসেবক হিসেবে থাকতে চাই। এ শহরে সকল ধর্মের, বর্ণের, ভাষার মানুষ রয়েছে। আমার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে তাদের জন্য কাজ করা, তাদের পাশে থেকে সেবক হিসেবে প্রতিটি দায়িত্ব পালন করা।”

মেয়র বলেন, “গত ১৮ বছর আপনারা যারা দলের জন্য কাজ করেছেন, তাদের ত্যাগের কথা আমি কখনও ভুলবো না। আপনাদের মধ্যে অনেকেই পরিবার থেকে দূরে থেকেছেন, আর্থিক সংকটের মধ্যেও দলের জন্য লড়াই করেছেন। আপনাদের এ ত্যাগ ও ভালোবাসা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। চট্টগ্রামসহ সারা দেশে অনেক নেতা-কর্মী মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন, জীবন দিয়েছেন। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই আপনারা আদর্শচ্যুত হননি। আমি আপনাদের সন্তান। তাই আপনাদের প্রতি আমার এ ঋণ শোধ করার সামর্থ্য নেই।”

সেই সাথে তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম শহরকে ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি ও হেলদি সিটি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তার যে পরিকল্পনা রয়েছে, সেটি বাস্তবায়নে সকলের সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, “এই শহরটি শুধু আমার নয়, এ শহর আমাদের সবার। আমরা সবাই মিলে যদি একসঙ্গে কাজ করি, তবে চট্টগ্রাম হবে একটি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও সবুজ নগরী। আসুন, সবাই মিলে এ স্বপ্ন পূরণে কাজ করি। আমাকে সময় দিন। ইনশাআল্লাহ, আমি আপনাদের আস্থার প্রতিদান দেব।”

এর আগে দুপুর সোয়া বারোটার দিকে ঢাকা থেকে সোনার বাংলা ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছালে নেতাকর্মীরা ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করে তাকে বরণ করে নেন। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে জড়ো হওয়া নেতা-কর্মীরা হাত ভর্তি ফুল নিয়ে, স্লোগানে মুখরিত করে তাকে নিয়ে পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন থেকে সংবর্ধনা মঞ্চে নিয়ে আসেন। সেখানে তাকে চট্টগ্রামের নতুন দায়িত্বভার নেয়ার জন্য সংবর্ধিত করা হয়। হাজারো নেতা-কর্মী ও সমর্থকের সম্মিলিত ভালোবাসায় অভিভূত মেয়র ডা. শাহাদাত তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে ডা. শাহাদাত হোসেন হজরত শাহ আমানত (র.) ও বদর আউলিয়া (র.) মাজারে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং সেখানে দোয়া-মোনাজাতে অংশ নেবেন। পরবর্তীতে টাইগারপাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

রোববার (৩ নভেম্বর) ঢাকার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ডা. শাহাদাত হোসেনকে শপথবাক্য পাঠ করান উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। শপথগ্রহণ শেষে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

নগরবাসীর প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং আন্তরিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “আপনারা সবসময় আমার হৃদয়ের গভীরে আছেন। আমি আপনাদের পাশে আছি এবং থাকব। এই শহরকে উন্নত, নিরাপদ ও বসবাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করতে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”