ঘূর্ণিঝড় দানা আতঙ্কে পশ্চিমবঙ্গে ৪ দিন বন্ধ স্কুল, সতর্ক মমতা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উপকূল থেকে এখনও কয়েক শত কিমি দূরে অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে বুধবারই (২৩ অক্টোবর) ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।

এরপর বৃহস্পতিবার রাতেই এটি আছড়ে পড়তে পারে উপকূলে। এমন অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আতঙ্কে পশ্চিমবঙ্গে টানা ৪ দিন স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যটির দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে জারি করা হয়েছে সতর্কতা।

এই অবস্থায় সম্ভাব্য দুর্যোগের আগে নিজের উদ্বেগ ও সতর্কতার কথা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার (২৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় দানা সম্পর্কে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের (আইএমডি) পূর্বাভাসের পরে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে বলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে।

ঘূর্ণিঝড়টি ২৪ অক্টোবরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আছড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে ২৩ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত চারদিন রাজ্যের ৯ টি জেলার সব স্কুলে ছুটি থাকবে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বুধবার থেকেই সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় সতর্কতা জারি করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ওড়িশার পুরী এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাগরদ্বীপের মধ্যবর্তী কোনও অংশ দিয়ে স্থলভাগে ঢুকতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। আর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলার ওপর পড়তে পারে। দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে বেশি প্রভাব পড়ার আশঙ্কা।

এছাড়াও এই তিন জেলার পার্শ্ববর্তী জেলা কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে প্রভাব পড়তে পারে। এই ৯টি জেলাতে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, “দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই ইন্ট্রিগ্রেটেড কন্ট্রোলরুম চালু করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা সেই কন্ট্রোল রুম খোলা থাকছে। বুধবার থেকেই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। মাইকিং চলছে সর্বত্র।”

দুর্যোগ মোকাবিলায় আগে যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এ বারও সেই সব ব্যবস্থা থাকছে। উপকূলবর্তী নিচু এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে রাজ্য এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। বন্ধ থাকবে ফেরি চলাচল।

দুর্যোগের আশঙ্কা কাটার পরই আবার ফেরি চলাচল শুরু হবে বলে জানান মমতা। পাশাপাশি সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় পর্যটকদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করারও নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আগেভাগেই জেলাগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণের ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মমতা বলছেন, “আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী- ২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবর সকালের মধ্যে পুরি এবং সাগরদ্বীপের মাঝে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে। সেই সময় ঝড়ের গতি ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১০০ কিলোমিটার থাকতে পারে। কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিবেগও দেখা যেতে পারে।”

তিনি আরও বলেছেন, উপকূলবর্তী এলাকায় ফেরি চলাচল বন্ধ। ত্রাণ মজুত রাখা আছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ২৩ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত ৯টি জেলার সব স্কুল ছুটি দেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নিম্নচাপটি ক্রমশ পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। আরও ঘনীভূত হয়ে বুধবার সকালেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে নিম্নচাপটি। বঙ্গোপসাগরের একাংশ এখন থেকেই উত্তাল হতে শুরু করেছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত সোমবার থেকেই পূর্ব ও মধ্য বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। বৃহস্পতিবার সমুদ্র আরও উত্তাল হবে। পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সমুদ্র উত্তাল থাকবে।