আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনের ৬-এ ধারার সাংবিধানিক বৈধতা মেনে নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সংবিধান বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় দিয়েছে। তবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই রায় হয়নি। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি এমএম সুন্দ্রেশ এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র রায়ের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। ৬-এ ধারাকে ‘অসাংবিধানিক’ বলেছেন বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা।
আসামে অবৈধ অভিবাসন সংক্রান্ত ওই ধারা ‘অসাংবিধানিক’ বলে দাবি করে শীর্ষ আদালতে মোট ১৭টি আবেদন জমা পড়েছিল। সেগুলো একত্র করে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সংবিধান বেঞ্চে গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুর দিকে শুনানি শুরু হয়েছিল। বৃহস্পতিবার এর রায় ঘোষণা করে শীর্ষ আদালত বলেছে, আসাম চুক্তি মেনে অবৈধ অভিবাসনের সমস্যার এটি একটি রাজনৈতিক সমাধান।
আবেদনকারী পক্ষের অভিযোগ ছিল, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৬-এ ধারা ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদকে লঙ্ঘন করছে। ওই ধারা অনুযায়ী, আসামে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিকেই প্রমাণ করতে হয় তিনি ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সাম্যের অধিকার রয়েছে। যে কেউ, তিনি দেশি, বিদেশি এমনকি নাগরিক না হয়েও যদি ভারতে বাস করেন, তিনিও সংবিধানে বর্ণিত ওই সাম্যের অধিকার ভোগ করবেন। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, শরণনার্থীদের আশ্রয়ের প্রসঙ্গ নয়, এক্ষেত্রে নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টির সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করা হয়েছে।
শুধু আসামের জন্যই নাগরিকত্ব আইনের ৬-এ ধারাটি তৈরি করা হয়েছিল। আসামে অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পর ১৯৮৫-তে ভারত সরকার এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে হওয়া ‘আসাম চুক্তি’র অঙ্গ হিসেবে নাগরিকত্ব আইনের ৬-এ ধারা তৈরি করা হয়েছিল। ওই ধারা অনুযায়ী, ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত আসামে অনুপ্রবেশ করা বাংলাদেশিদের নাগরিকত্বের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপর সীমান্ত পেরিয়ে যারা ভারতে গেছেন তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না।
এক্ষেত্রে কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশে রূপান্তরিত হওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে ঘোষণা করেছিলেন, ১৯৭১-এর পর দেশ ছেড়ে যাওয়া সবাইকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। সেজন্যই ৬-এ ধারায় ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য ১৯৭১-এর ২৫ মার্চকে বেছে নেওয়া হয়। কারণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ। কিন্তু এই মামলার আবেদনকারীদের বক্তব্য, আসাম চুক্তিকে ২৫৩ ধারার অধীনে বৈধতা দেওয়ার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংসদ। সুতরাং আসাম চুক্তিরই বৈধতা নেই। কিন্তু শীর্ষ আদালত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের আবেদন মেনে ‘১৯৭১-এর ২৫ মার্চ’-কে সময়সীমা ধার্য করার ব্যবস্থাতেই রায় দিয়েছে।