আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরান ইতোমধ্যে ইসরায়েলে সম্ভাব্য হামলার জন্য অন্তত ১০টি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রস্তুত রেখেছে, দেশের সেনাবাহিনীর এলিট শাখা ইসলামী রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ইরানের বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সি।
লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযানের প্রতিবাদে গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। এই ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর, ৫ অক্টোবর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইরানে হামলার ঘোষণা দেন। তবে, তিনি কখন এই হামলা চালানো হবে সে সম্পর্কিত কোনো সুনির্দিষ্ট দিন বা তারিখ ঘোষণা করেননি।
নেতানিয়াহুর এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় আইআরজিসির এক কর্মকর্তা তাসনিম নিউজকে জানান, “নেতানিয়াহু এ কথা বলতেই পারেন; তবে যদি ইসরায়েল ইরানের ভূখণ্ড ও সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা করে, কিংবা ইরানের ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করে, সেক্ষেত্রে সেই হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার মতো সক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা অন্তত ১০টি পরিকল্পনা হাতে রেখেছি। এই পরিকল্পনার কয়েকটি বাস্তবায়ন শুরু করলে ইসরায়েল অভূতপূর্ব সংকটে পড়বে।”
মধ্যপ্রাচ্যের বিদ্বেষ ও সাম্প্রতিক সংঘাত
ইরান এবং ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরবৈরী দেশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্বেষপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ইরানের সমর্থন ও মদতপুষ্ট বিভিন্ন সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী, যেমন হিজবুল্লাহ, ইসরায়েলকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে কাজ করছে। ২০২৩ সালে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের বাঁধার পর থেকে এই বৈরিতা আরও তীব্র হয়েছে। গত বছর ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ এখনও চলছে।
ইসরায়েলি বাহিনী হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার পর থেকে, হিজবুল্লাহ দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করেছে। ইরানের সমর্থনপুষ্ট সশস্ত্র ইসলামিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে। উভয়পক্ষের সংঘাতে এ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, যার অধিকাংশই হিজবুল্লাহর সদস্য এবং লেবাননের নাগরিক।
সেপ্টেম্বরে, ইসরায়েল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ চালিয়ে গেছে। ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর অভিযানে হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এর ফলে, গত দুই সপ্তাহে হিজবুল্লাহর চেইন অব কমান্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে ইসরায়েল।
ইরানের প্রেসিডেন্টের সতর্কবাণী
গত ৩ অক্টোবর, কাতারের রাজধানী দোহায় এক ব্রিফিংয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, “আমাদের দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না। তবে, ইসরায়েল যদি ফিলিস্তিন এবং লেবাননে সামরিক অভিযান চালিয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে ইরান আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাব্য পরিণতি
ইরান এবং ইসরায়েলের এই সংঘাত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমের সময় মানবাধিকার রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের মতো মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে নজর দিচ্ছেন, যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইসরায়েলি বাহিনী এবং ইরানের আইআরজিসি উভয়ই তাদের সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে উদ্যোগী হয়েছে। ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননে বিমান হামলা চালানোর পাশাপাশি, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে স্থল অভিযান শুরু করেছে। অন্যদিকে, আইআরজিসি ইসরায়েলে সম্ভাব্য হামলার জন্য ১০টি পরিকল্পনা প্রস্তুত রেখেছে, যা ইসরায়েলকে সংকটে ফেলতে সক্ষম হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
অর্থনীতিবিদ ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, “মধ্যপ্রাচ্যের এই বিদ্বেষপূর্ণ সম্পর্ক এবং সামরিক কর্মকাণ্ডের ফলে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে। ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে এই ধরনের সংঘাত দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করবে।”
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, “যে কোনো সামরিক অভিযান চলাকালীন মানবাধিকার রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। গ্রেপ্তার ও বিচারের প্রক্রিয়ায় ন্যায়সঙ্গততা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে কোনো অনিয়ম বা অন্যায় লঙ্ঘন না ঘটে।”
ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যকার বিদ্বেষপূর্ণ সম্পর্ক এবং সামরিক সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে রেখেছে। ইরানের প্রস্তুত পরিকল্পনা এবং ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া এই অঞ্চলে সম্ভাব্য বৃহৎ সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা এবং মধ্যস্থতা এই সংকটের সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।