বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গঠনে সরকারের করণীয়


নজরুল কবির দীপু : বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং। দেশের ব্যবসায়ীরা দ্রুত ব্যবসার পরিবেশের উন্নতির প্রত্যাশা করছেন, যাতে তারা তাদের উদ্যোগকে আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে পারেন। সাম্প্রতিক সময়ে শিল্পাঞ্চলের অস্থিরতা এবং কোভিড-পরবর্তী সময়ের নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন। এই চ্যালেঞ্জগুলো ব্যবসার প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করছে এবং দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

কোভিড মহামারী পরবর্তী সময় থেকেই দেশীয় বিনিয়োগকারীরা নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। ভোক্তাদের চাহিদার হ্রাস, উচ্চমূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, উচ্চ সুদের হার ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঋণের উচ্চ সুদের হার ব্যবসায়ীদের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা, কারণ এটি তাদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ায় এবং ব্যবসার বিস্তারের পথে বাধা সৃষ্টি করে।

ঋণের উচ্চ সুদের হার ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ব্যাংক খাতের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ঋণখেলাপি সংস্কৃতি এবং অর্থ পাচারের কারণে দেশের ব্যাংক খাত রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা রোধে কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণ করা জরুরি। এর ফলে ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে এবং ব্যবসায়ীরা বিশ্বাসযোগ্য একটি আর্থিক পরিবেশে বিনিয়োগ করতে সক্ষম হবেন।

আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে ধীরগতি করছে। সরকারি নীতিমালা ও সিদ্ধান্তের দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়ছে। বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত না করতে সরকারের উদ্যোগী পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। গ্যাস এবং বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা ব্যবসার জন্য অপরিহার্য। এ ছাড়া, শিল্পাঞ্চলে অসন্তোষ এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। উৎপাদন খরচ বাড়লে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়, যা ভোক্তাদের চাহিদা কমাতে পারে এবং ব্যবসার লাভজনকতায় প্রভাব ফেলতে পারে।

ব্যবসার পরিবেশের উন্নতির জন্য সরকারের দায়িত্ব অপরিহার্য। বিগত সরকারের আমলে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে নানা আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তবে, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। এর প্রধান কারণ ছিল ব্যাংক খাতের বিশৃঙ্খলা এবং অর্থনৈতিক নীতিমালার অকার্যকর বাস্তবায়ন। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।

ঘুষ, দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজি অর্থনৈতিক কার্যক্রমের প্রতিটি স্তরে প্রভাব ফেলছে। এই অনিয়মগুলি পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়াচ্ছে এবং ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে। উৎপাদন খরচ বাড়লে ব্যবসায়ীদের লাভজনকতা কমে যায় এবং তারা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হারাতে পারেন। তাই, দেশের সব স্তরে সব ধরনের অনিয়ম বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের উচিত ঘুষ, দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে ব্যবসায়ীরা নির্ভয়ে তাদের উদ্যোগ পরিচালনা করতে পারেন।

অর্থনীতির স্বার্থে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে সরকারের নীতিমালা ও পদক্ষেপের মধ্যে একটি সুশৃঙ্খল ও সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। ব্যবসায়ীদের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং সমর্থন ব্যবসার পরিবেশকে আরও শক্তিশালী করবে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের উদ্যোগী পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি ব্যাংক খাতের পুনর্গঠন ও নীতিমালার পুনর্বিবেচনা অত্যন্ত জরুরি। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হলে ব্যাংকিং নীতিমালার কঠোর বাস্তবায়ন এবং ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি গ্রহণ করা উচিত।

বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশের অর্থনীতির সংযোগ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। তবে, দেশের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান না হলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাবে। তাই, ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। অর্থনৈতিক নীতিমালার স্থিতিশীলতা ব্যবসায়ীদের আস্থা জোগাবে এবং তারা আরও বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হবেন।

সামগ্রিকভাবে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি একটি মৌলিক দিক। ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ এবং চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান না হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা কঠিন হবে। তাই, সরকারের উচিত ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতির জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা, ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতি, ঘুষ ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। এভাবে, ব্যবসায়ীরা আগ্রহসহ বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সুদৃঢ় হবে।

বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের উন্নতির প্রয়োজনীয়তা

ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থেই নয়, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুস্থ ব্যবসায়িক পরিবেশ দেশের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে এবং নাগরিকদের জীবনের মান উন্নয়নে সহায়ক হয়। ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতির মাধ্যমে দেশের পণ্য ও সেবার গুণগত মান বৃদ্ধি পায়, যা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠে।

উচ্চ সুদের হার ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় বাধা। ঋণের উচ্চ সুদের হার ব্যবসার সম্প্রসারণের পথে বাধা সৃষ্টি করে এবং নতুন উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলিকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সরকারকে ঋণের সুদের হার হ্রাস করার জন্য নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে, যা ব্যবসায়ীদের আর্থিক চাপ কমাবে এবং তাদের ব্যবসার সম্প্রসারণে সহায়তা করবে। এছাড়া, ঋণ প্রদান প্রক্রিয়ার সরলীকরণ এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করাও ব্যবসায়ীদের জন্য উপকারী হতে পারে।

বাজারের অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক সংকট ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। ব্যবসার স্থায়িত্ব বজায় রাখতে হলে অর্থনৈতিক নীতিমালার স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অপরিহার্য। সরকারের উচিত অর্থনৈতিক নীতিমালার প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্টতা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, যাতে ব্যবসায়ীরা তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নির্ভয়ে বাস্তবায়ন করতে পারেন।

ব্যাংক খাতের পুনর্গঠন এবং ঋণ খেলাপির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ঋণ খেলাপি এবং অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যাংক খাতকে পুনর্গঠন করা যেতে পারে। এর ফলে ব্যাংকগুলির স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যবসায়ীদের প্রতি ঋণের প্রাপ্যতা সহজ হবে। ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হলে বিনিয়োগকারীরা আরও বিশ্বাসী হয়ে উঠবেন এবং তারা আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন।

শিল্পাঞ্চলের অস্থিরতা এবং উৎপাদন খরচের বৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দেয়। উৎপাদন খরচ কমাতে হলে সরকারকে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। উৎপাদন খরচ কমাতে উৎপাদন প্রক্রিয়ার দক্ষতা বৃদ্ধি, সঠিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। এ ছাড়াও, ব্যবসায়ীদের প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে, যা উৎপাদন খরচ কমাতে সহায়ক হবে।

বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি: সরকারের ভূমিকা

বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের ভূমিকা অপরিহার্য। সরকারকে ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধাজনক নীতিমালা এবং শর্তাবলী প্রদান করতে হবে, যাতে তারা তাদের উদ্যোগকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারেন। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের নিম্নোক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত :

১. নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিমালা : ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে সহজতর করতে সরকারকে নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিমালা রূপায়ণ করতে হবে। জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়া কমিয়ে আনতে এবং ব্যবসায়ীদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় করতে সহায়তা করতে হবে।

২. প্রযুক্তিগত সহায়তা : ব্যবসায়ীদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং গবেষণায় সহায়তা প্রদান করতে হবে। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।

৩. বাজেট ও কর নীতিমালা : ব্যবসায়ীদের কর সুবিধা প্রদান করে তাদের আর্থিক চাপ কমানো যেতে পারে। কর হ্রাস এবং অন্যান্য আর্থিক প্রণোদনা ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে।

৪. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ : ব্যবসায়ীদের জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালু করে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। দক্ষ কর্মীশক্তি ব্যবসার উন্নতির জন্য অপরিহার্য।

৫. অবকাঠামো উন্নয়ন : শিল্পাঞ্চল এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলির অবকাঠামো উন্নয়ন করে ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে পরিবহন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা উচিত।

৬. আইনশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা : ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে সুরক্ষিত রাখতে সরকারকে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। ব্যবসায়ীদের সম্পদ এবং বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

৭. বিনিয়োগ প্রণোদনা : নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠা এবং বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য বিনিয়োগ প্রণোদনা প্রদান করা যেতে পারে। নতুন উদ্যোগের জন্য আর্থিক সহায়তা এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে।

দুর্নীতি ও ঘুষের প্রভাব

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দুর্নীতি এবং ঘুষ একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। দুর্নীতি এবং ঘুষ ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে অবিশ্বাস সৃষ্টি করে। ব্যবসায়িক পরিবেশে দুর্নীতি কমাতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ঘুষ, দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এর ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যবসায়ীরা নির্ভয়ে তাদের উদ্যোগ পরিচালনা করতে পারবেন।

দুর্নীতি এবং ঘুষের ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায় এবং পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। উৎপাদন খরচ বাড়লে ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া সম্ভব, যা দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতি করতে পারে।

ব্যবসায়িক পরিবেশে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে সরকারকে ঘুষ, দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এর ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যবসায়ীরা আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবেন।

গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিতকরণ

ব্যবসায়িক কার্যক্রমে গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি। শক্তি সংকট ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে এবং উৎপাদন খরচ বাড়ায়। গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে শক্তি সংকট মোকাবেলা করা যেতে পারে। এছাড়া, বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং অপচয় কমিয়ে বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব।

বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ

দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতির সাথে সাথে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। বিনিয়োগকারীরা একটি স্থিতিশীল এবং অনুকূল পরিবেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন, যেখানে তারা তাদের বিনিয়োগের ফলাফল দেখতে পারেন। সরকারের নীতিমালা এবং পদক্ষেপের সঠিক বাস্তবায়ন বিনিয়োগকারীদের আস্থা জোগাবে এবং তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে।

নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করা এবং সেখানে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি, জৈবপ্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতগুলোতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বিশাল। এই খাতগুলোর উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে এবং দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে।

বিনিয়োগবান্ধব ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি কর্মসংস্থানে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, যা দেশের যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করবে। কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে সমর্থন করবে এবং দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতায় অবদান রাখবে।

শেষ কথা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি অপরিহার্য। উচ্চ সুদের হার, ব্যাংক খাতের বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, ঘুষ এবং শক্তি সংকটের মত সমস্যাগুলো সমাধান করতে সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের জন্য নয়, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

একটি সুস্থ এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সুদৃঢ় হবে, বিনিয়োগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে এবং কর্মসংস্থানে উন্নতি হবে। এই সকল পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি সফল এবং স্থিতিশীল অর্থনীতির পথে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে, যা দেশের জনগণের জীবনের মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।

লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, একুশে পত্রিকা