নিষিদ্ধ নগরী লাসা: রহস্যের জালে বাঁধা তিব্বতের এক টুকরো


একুশে প্রতিবেদক : বিশ্বজুড়ে অগণিত শহর তাদের নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় গুরুত্ব দিয়ে পরিচিত। তবে এমন কিছু শহর আছে যেগুলো শুধু ইতিহাসের অধ্যায়ে সীমাবদ্ধ না থেকে রহস্য, আকর্ষণ এবং নিষিদ্ধতার মোড়কে ঘেরা। তেমনই এক শহর হলো লাসা, যেটি তিব্বতের রাজধানী।

তিব্বত দীর্ঘকাল ধরে মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, বিশেষ করে কারণটা এর অপ্রচলিত ধর্মীয় রীতি, শ্বাসরুদ্ধকর উচ্চতা, এবং নিঃসঙ্গতার অনুভূতি। লাসা শুধু তিব্বতের একটি শহর নয়, এটি একটি প্রতীক, একটি রহস্যময় কেন্দ্র যা তার দর্শনার্থীদের বিস্ময়ে আচ্ছন্ন করে রাখে।

তিব্বত: একটি নিঃসঙ্গ বিশ্বের প্রতিচ্ছবি

তিব্বতের অবস্থান হিমালয়ের উত্তরে। অনেক ভূগোলবিদ এবং গবেষক তিব্বতের অবস্থানের কারণে এর বিচ্ছিন্নতাকে রহস্যের মূল কারণ হিসেবে দেখেন। এখানে হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের যাতায়াত ছিল সীমিত, যা এই অঞ্চলটিকে বহির্বিশ্বের থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রেখেছে।

১৯১২ সালে ত্রয়োদশ দালাইলামার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় তিব্বত। তবে তার পরেও এটি গণচীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত হয়। তিব্বতিরা তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার দাবি করলেও, চীনের প্রভাব এই অঞ্চলের ওপর বিরাজমান।

১৯৫৯ সালে তিব্বত চীনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিল। যদিও সেই সংগ্রাম সফল হয়নি, তিব্বত এখনও তার নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু তিব্বতের অবস্থা শুধু রাজনৈতিক সংকটে আবদ্ধ নয়, বরং তার প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং ভৌগলিক অবস্থান এটিকে এক চরম প্রতিকূল এবং দুর্গম স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

তিব্বতের বেশির ভাগ অংশই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত। এই উচ্চতায় শ্বাসপ্রশ্বাস চালানো বা সাধারণ জীবনযাপন করা অত্যন্ত কষ্টকর। ফলে বহু মানুষের কাছে তিব্বত পৌঁছানো শুধুই একটি স্বপ্ন থেকে যায়।

 

লাসা: এক রহস্যময় এবং নিষিদ্ধ নগরী

তিব্বতের রাজধানী লাসা একটি অন্যতম রহস্যময় স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রাচীনকাল থেকেই বহিরাগতদের জন্য এই শহর নিষিদ্ধ ছিল। শুধু প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা নয়, লাসার ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং সামাজিক বিধিনিষেধও এর গোপনীয়তাকে আরো শক্তিশালী করেছে। বহির্বিশ্বের মানুষ লাসাকে একটি অলৌকিক শহর বলে মনে করত। লাসায় প্রবেশাধিকার না থাকায় পর্যটক এবং গবেষকদের কাছে এটি আরো বেশি রহস্যময় হয়ে উঠেছে।

লাসার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব। লাসা শুধু একটি শহর নয়, এটি তিব্বতের বৌদ্ধ ধর্মের কেন্দ্রস্থলও। এই শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত পোতালা প্রাসাদ বৌদ্ধ ধর্মগুরু দালাইলামার বাসস্থান হিসেবে পরিচিত। এই প্রাসাদটি এতই উচ্চতায় অবস্থিত যে, এটি পৃথিবীর ছাদ বলে বিবেচিত হয়।

লাসার চারপাশের প্রকৃতিও এই শহরের রহস্যময়তাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। মরুভূমি এবং উচ্চ পর্বতের মাঝে অবস্থিত লাসা বছরের বেশির ভাগ সময় তুষারে ঢাকা থাকে। এই পরিবেশে প্রবেশ করার কথা সহজেই কারও মাথায় আসে না। তাই স্বাভাবিকভাবেই বহির্বিশ্বের কাছে এটি একটি নিষিদ্ধ এবং রহস্যময় স্থান হিসেবে গণ্য হয়েছে।

পোতালা প্রাসাদ: ধর্ম ও শক্তির প্রতীক

লাসার সবচেয়ে বিখ্যাত এবং উল্লেখযোগ্য স্থাপনা হলো পোতালা প্রাসাদ। দালাইলামার বাসস্থান হিসেবে পরিচিত এই প্রাসাদটি শুধু তিব্বতের নয়, বরং গোটা বিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত। পোতালা প্রাসাদ শুধু আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় স্থান নয়, এটি তিব্বতের শক্তি এবং ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়। ১৯০৪ সালে প্রথমবারের মতো বাইরের বিশ্বের মানুষেরা পোতালা প্রাসাদের ছবি দেখতে পায়। আমেরিকার ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকায় প্রকাশিত সেই ছবি তৎকালীন বিশ্বের সামনে লাসার এক অনন্য দিক উন্মোচিত করে।

পোতালা প্রাসাদের স্থাপত্যও আশ্চর্যজনক। এর চূড়া সোনার তৈরি বলে জনশ্রুতি রয়েছে। প্রাসাদের ভেতরে বৌদ্ধ মন্দির এবং ধর্মীয় স্মৃতিসৌধ ছড়িয়ে রয়েছে। চার হাজার ভরি ওজনের সোনার প্রদীপও এই প্রাসাদে রয়েছে, যা তিব্বতের ধর্মীয় সংস্কৃতির একটি অনন্য প্রতীক। তিব্বতের বৌদ্ধ লামারা প্রায়শই এই প্রাসাদে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন এবং তাদের প্রতিটি আচার বৌদ্ধ ধর্মের গভীর আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটায়।

ধর্মীয় প্রভাব ও লামাদের আচার-অনুষ্ঠান

তিব্বতিদের জীবনে ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের প্রধান ধর্মগুরু দালাইলামা, যাকে তারা ভগবান বুদ্ধের পুনর্জন্ম বলে মনে করেন। যখন কোনো দালাইলামা নির্বাচিত হন, তিব্বতিরা বিশ্বাস করেন যে সেই ব্যক্তির মধ্যে ভগবান বুদ্ধের আত্মা এসে উপস্থিত হয়।

দালাইলামা নির্বাচনের পদ্ধতি অত্যন্ত রহস্যময় এবং রোমাঞ্চকর। তিব্বতের ধর্মীয় রীতিনীতি এবং আচার-অনুষ্ঠান বহির্বিশ্বের মানুষের কাছে আজও অজানা রয়ে গেছে, যা লাসার রহস্যময়তাকে আরো গভীর করে তুলেছে।

তিব্বতিদের মধ্যে একটি বিশেষ ধর্মীয় আচার হলো তাদের মৃতদেহের সৎকার পদ্ধতি। প্রাচীনকালে এই আচারকে নিয়ে বহু মিথ ছড়িয়ে পড়ে। বলা হয়, মৃতদেহকে তিব্বতিরা টুকরো টুকরো করে কেটে পশুপাখির খাদ্য হিসেবে উৎসর্গ করে। যদিও এই আচারকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তিব্বতিদের সংস্কৃতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা বিশ্বাস করে, এর মাধ্যমে মৃতদেহ পৃথিবীর অন্যান্য জীবের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং একটি পরিপূর্ণ চক্র সম্পন্ন হয়।

তিব্বতের বিচ্ছিন্নতা এবং প্রকৃতির প্রভাব

লাসার ভৌগোলিক অবস্থান এবং এর প্রাকৃতিক পরিবেশ শহরটিকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। লাসার চারপাশে মরুভূমি এবং পাহাড় রয়েছে যা মানুষের যাতায়াতকে কঠিন করে তুলেছে। বালুর সমুদ্র নামে পরিচিত গোবি মরুভূমি লাসার কাছে অবস্থিত এবং এর মধ্য দিয়ে পাড়ি দেওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক।

উচ্চতায় অবস্থিত হওয়ার কারণে এখানে বায়ুমণ্ডল তুলনামূলক পাতলা, ফলে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তুষারের কারণে তিব্বতের বেশির ভাগ অঞ্চল বছরের প্রায় আট মাস যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। তাই বহির্বিশ্বের কাছে তিব্বত এবং লাসা একটি রহস্যময়, নিষিদ্ধ নগরী হিসেবেই পরিচিত।

তিব্বত ও বহির্বিশ্বের সম্পর্ক

অতীতে তিব্বতের সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ ছিল না বললেই চলে। বহিরাগতদের তিব্বতে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল এবং ধর্মীয় প্রভাবের কারণে তিব্বতিরাও বাইরের বিশ্ব থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা করেছিল। তবে আধুনিককালে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে কিছু পর্যটক এবং গবেষক তিব্বতে প্রবেশের অনুমতি পান, যদিও এর পরিমাণ খুবই সীমিত। তিব্বতের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এখনও বহির্বিশ্বের কাছে অপরিচিত এবং তিব্বত তার রহস্যময় চরিত্রকে ধরে রেখেছে।

তিব্বতের ভূ-প্রকৃতি এবং জনজীবন

তিব্বতের রহস্যময়তার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এর ভৌগোলিক অবস্থান এবং আবহাওয়া। তিব্বতকে ‘পৃথিবীর ছাদ’ বলা হয় কারণ এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থানে অবস্থিত। এখানকার বেশির ভাগ ভূ-ভাগই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬ হাজার ফুটেরও ওপরে।

এই উচ্চতায় স্বাভাবিক জীবনযাপন অত্যন্ত কঠিন, এবং বহিরাগতদের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়াও বিপজ্জনক হতে পারে। পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব এবং বায়ুমণ্ডলের পাতলাতা অনেকেই সহ্য করতে পারেন না। তাই বহু পর্যটক এবং অভিযাত্রীর জন্য তিব্বতে ভ্রমণ করা একটি দুঃসাধ্য কাজ।

তিব্বতের জনসংখ্যা অনেকটাই কম, এবং এখানকার বাসিন্দাদের জীবিকা নির্ভর করে মূলত পশুপালন ও কৃষির ওপর। তবে তিব্বতের ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে এখানকার খাদ্য এবং জীবনধারণের পদ্ধতি অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেকটাই আলাদা। এখানে মূলত যব, গম, এবং বিভিন্ন শস্যের চাষ করা হয়।

তবে, খাদ্য-উৎপাদন সীমিত হওয়ার কারণে তিব্বতিরা তাদের জীবনধারণের জন্য পশুসম্পদকেই বেশি নির্ভর করে থাকে। বিশেষত, ইয়াক (তিব্বতের একটি স্থানীয় পশু) তিব্বতিদের জীবনধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইয়াকের দুধ, মাংস, এবং লোম তিব্বতিদের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।

তিব্বতের সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান এবং উৎসব

তিব্বতিরা তাদের সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান এবং উৎসবগুলিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালন করে। তিব্বতের ধর্মীয় আচার এবং বৌদ্ধধর্মের প্রভাব এতটাই গভীর যে, প্রতিটি আচার-অনুষ্ঠানেই ধর্মের কিছু না কিছু প্রভাব পাওয়া যায়। তিব্বতিরা প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মের তন্ত্রমন্ত্র এবং ধ্যানচর্চার ওপর নির্ভরশীল। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং লামাদের নির্ধারিত অনুশাসন এখানে সামাজিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

লাসার সবচেয়ে বিখ্যাত উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লোসার উৎসব, যা তিব্বতের নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়। এই উৎসবটি পুরো তিব্বতে অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালিত হয় এবং এতে অংশগ্রহণ করে তিব্বতের সব স্তরের মানুষ। এছাড়াও, তিব্বতের অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবগুলিও তিব্বতিরা উদযাপন করে ধর্মীয় গভীরতা এবং আধ্যাত্মিক ভাবনা নিয়ে। এই উৎসবগুলির প্রতিটিই তিব্বতিরা তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করে, যা তিব্বতের আধ্যাত্মিক জীবনধারার প্রতিফলন ঘটায়।

তিব্বতের নিষিদ্ধতা: এক অন্তর্নিহিত রহস্য

বহু বছর ধরে তিব্বত নিষিদ্ধ ছিল। তিব্বতের এই নিষিদ্ধতা মূলত রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং ভৌগোলিক কারণে। তিব্বত তার নিজস্ব সংস্কৃতি, ধর্ম এবং রাজনীতির জন্য বাইরের বিশ্বের সাথে সংযোগ স্থাপন থেকে বিরত ছিল।

তিব্বতিরা তাদের নিজস্ব আচার-অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর এতটাই নির্ভরশীল ছিল যে, তারা বহিরাগতদের থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে চেয়েছিল। তাদের বিশ্বাস এবং ধর্মীয় রীতিনীতির ফলে তারা বাইরের বিশ্বের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে অনীহা প্রকাশ করেছে। বিশেষত, দালাইলামার নির্দেশনা অনুযায়ী বহিরাগতদের জন্য তিব্বত ছিল একটি নিষিদ্ধ স্থান।

তিব্বতের অনেকগুলো ধর্মীয় স্থান যেমন পোতালা প্রাসাদ, জোখাং মন্দির ইত্যাদি বহিরাগতদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। শুধু ধর্মীয় কারণেই নয়, তিব্বতের শারীরিক ও পরিবেশগত অবস্থার কারণেও এই অঞ্চলটি বহিরাগতদের জন্য অনুপযুক্ত। অনেকেই তিব্বতের উচ্চতা এবং কঠিন পরিবেশের কারণে এখানে আসতে পারেননি, বা এলেও অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

তিব্বতের কঠোর এবং রুদ্ধ সমাজ ব্যবস্থা বহির্বিশ্বের কাছে এটিকে রহস্যময় করে তুলেছে। বহিরাগতদের জন্য তিব্বতের সমাজে প্রবেশাধিকার সীমিত থাকায়, এটি বহির্বিশ্বের কাছে একটি অজানা এবং রহস্যময় স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। তবে আধুনিককালে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে, এবং তিব্বতের কিছু অংশ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে। তবুও, এর বেশিরভাগই এখনও নিষিদ্ধ এবং আড়ালে ঢাকা রয়ে গেছে।

লাসা এবং আধুনিকতা: এক দ্বৈত প্রতিচ্ছবি

তিব্বতের রাজধানী লাসা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ধর্মীয় গুরুত্বের কারণে আজও বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত। আধুনিককালে কিছু পর্যটক এবং গবেষক তিব্বতের এই রহস্যময় নগরীর দিকে আকৃষ্ট হয়েছেন। যদিও তিব্বতের একটি বড় অংশ এখনও বহির্বিশ্বের জন্য বন্ধ, তবুও লাসা ধীরে ধীরে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিকাশ লাভ করছে। লাসার পুরনো আচার-অনুষ্ঠান এবং নতুন প্রযুক্তির সংমিশ্রণ এক নতুন ধরনের সমাজ গঠন করছে। তিব্বতের একান্ত সংস্কৃতি এবং বহির্বিশ্বের আধুনিকতার মধ্যে একটি সমন্বয় তৈরি হয়েছে।

তিব্বতের আধুনিকায়ন যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে, কিন্তু এটি তিব্বতের প্রাচীন এবং নির্জন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে এক আশ্চর্যজনক সংমিশ্রণ ঘটাচ্ছে। তিব্বত এখনও তার প্রাচীন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, তন্ত্রমন্ত্র এবং সামাজিক ব্যবস্থাকে মেনে চলছে, তবে পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে তিব্বতিরা নতুন সমাজ ও সভ্যতার সঙ্গে একীভূত হওয়ার চেষ্টাও করছে।

লাসা, তিব্বতের রাজধানী, কেবল একটি শহর নয়, এটি একটি জীবন্ত কিংবদন্তি, রহস্যে ঘেরা এক অঞ্চল। এর বিচ্ছিন্ন অবস্থান, গভীর ধর্মীয় প্রভাব এবং প্রতিকূল পরিবেশ লাসাকে পৃথিবীর অন্যান্য স্থান থেকে আলাদা করেছে।

পৃথিবীর উচ্চতম শহর লাসা, তিব্বতের প্রতীক। এর অবস্থান, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান একে অনন্য করে তুলেছে। তিব্বতিরা তাদের ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সংরক্ষণে যত্নবান, যা লাসাকে বহির্বিশ্বের কাছে রহস্যময় করে তুলেছে।

লাসার রহস্য আজও মানুষকে আকর্ষণ করে। ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা, ধর্মীয় প্রভাব এবং প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা লাসাকে একটি নিষিদ্ধ এবং রহস্যময় স্থান হিসেবে পরিচিত করেছে। লাসা এবং তিব্বতের রহস্য চিরকাল মানুষের কৌতূহল জাগাবে।