শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

বিরাজনীতিকীকরণ নিয়ে বিএনপির আশঙ্কা কতটা যৌক্তিক?

প্রকাশিতঃ ৩ অক্টোবর ২০২৪ | ২:৩৫ অপরাহ্ন

ঢাকা : ২০০৭ সালের এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় বাংলাদেশে যেমন বিরাজনীতিকীকরণের চেষ্টা হয়েছিল, তেমনি গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আবারো সে ধরনের প্রচেষ্টার আশঙ্কা করছে বিএনপি। দলটির ভেতরে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার বিষয় যেমন রয়েছে, তেমনি এই সরকারের উদ্দেশ্য এবং কর্মপদ্ধতি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নও রয়েছে।

বিএনপির নেতৃবৃন্দের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের একদিকে নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য, অন্যদিকে দলটির বিরুদ্ধে কিছু পক্ষের ‘পরিকল্পিত ক্যাম্পেইন’ তাদের শঙ্কিত করে তুলেছে। গত মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া দিগন্তকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “৫ আগস্টের পর গণতন্ত্রের লড়াইয়ে থাকা বৃহত্তর দল বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন পক্ষের সমালোচনা এসেছে। এর পেছনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত রয়েছে। আমরা এখানে এক-এগারোর গন্ধ পাচ্ছি এবং বিরাজনীতিকরণের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করছি। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “বাংলাদেশে রাজনীতি বাদ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়। দেশকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে হলে জনগণের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের নিয়েই কাজ করতে হবে। গণতান্ত্রিক পন্থাই উত্তম পন্থা।”

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম এবং শঙ্কা

গত মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ এবং তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতাদের মতে, বর্তমান সরকারের কার্যক্রমে বেশ কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে। সরকারের মেয়াদ নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হচ্ছে, কারণ একদিকে তারা বলছে দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন হবে, আবার অন্যদিকে দেড় বছরের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করার পরই নির্বাচন দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলছে।

স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, “বর্তমান সরকারের মেয়াদ প্রায় দুই মাস অতিক্রান্ত হলেও এখনো নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। জনগণের মনে প্রশ্ন রয়ে গেছে, কখন নির্বাচন হবে এবং রাষ্ট্র সংস্কার কিভাবে সম্পন্ন হবে?”

ছয়টি কমিশন এবং রাষ্ট্র সংস্কার

গত ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। এই কমিশনগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ ছয়টি কমিশনের কার্যক্রম নিয়েও আলোচনা হয়।

বিএনপির নেতাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রমে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গুরুত্ব পাওয়া উচিত। তারা নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ এবং প্রশাসনিক সংস্কারের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।

বিভিন্ন কমিটি গঠন

বিএনপি ইতোমধ্যে ছয়টি কমিটি গঠন করেছে, যেগুলোর মাধ্যমে তারা রাষ্ট্র সংস্কার এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কাজগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। সংবিধান পুনর্গঠন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।

বিএনপির মতে, বিরাজনীতিকরণের যেকোনো প্রচেষ্টা দেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তারা আশা করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণতন্ত্র এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে কাজ করবে। তবে তাদের কার্যক্রমে যে অস্পষ্টতা রয়েছে, তা দূর করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আরও পরিষ্কার বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।