একুশে ডেস্ক: জুলাই ও আগস্টের গণহত্যায় গত ১৩ আগস্ট পর্যন্ত দেশে মোট ৮৭৫ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৪২২ জন বিএনপির নেতাকর্মী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য জানান।
ফখরুল বলেন, পোশাকশ্রমিক কিংবা রিক্সাচালক। পাবলিক কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বাম কিংবা ডান আদর্শের অনুসারী, সকল মত ও পথের রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিন ব্যক্তি হতাহতের পরিচয় যাই হোক না কেন, প্রতিটি প্রাণের মূল্য ও রক্তের মর্যাদা সমান। আর তাই, সমান গুরুত্বের সাথেই প্রণয়ন করতে হবে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তালিকা ও নিশ্চিত করতে হবে সুবিচার। শেখ হাসিনার পদত্যাগের জন্য যে জাতীয় ঐকমত্য আমরা দেখতে পাই তা কিন্তু হঠাৎ করে গড়ে ওঠেনি। এটি মূলত অবৈধ সরকারের অত্যাচার-অবিচার, দুর্নীতি-দুঃশাসন, বঞ্চনা-অবজ্ঞা, এবং শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে, গণআকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটিয়ে, গণঅভ্যুত্থানে সর্বশক্তি দিয়ে রাজপথে নেমে আসে বিএনপি এবং এর সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল নয়, বিএনপির উদ্দেশ্য ছিল সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অংশগ্রহণে, গণঅভ্যুত্থানে সাংগঠনিকভাবে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখে, ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা।
আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম নির্যাতনের ভয়াবহতা তুলে ধরে ফখরুল জানান, অস্বাভাবিক নিপীড়ণের শিকার হয়ে ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, হুমাযুন পারভেজ,
সাজেদুল ইসলাম সুমন, জাকির সহ কেবল বিএনপির ৪২৩ জন নেতা-কর্মী এবং সকল রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ মিলিয়ে প্রায় ৭০০ জন গুম হয়েছেন। তাঁদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে, আমাদেরকে যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
‘কারাবন্দি নাসিরুদ্দিন পিন্টু ও বিএম বাকির হোসেনকে হত্যার মাধ্যমে যে নৃশংস সংস্কৃতি সূচনা করে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা, তারই ধারাবাহিকতায়, রংপুরের লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম ও অন্তত আরও ২০ জন বিএনপি নেতাকে নির্যাতনের মাধ্যমে কারাগারে খুন করা হয়। এসব হৃদয়বিদারক ঘটনায়, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হন বিএনপির ১ হাজার ৫৫১ জন নেতা-কর্মী।’
ফখরুল বলেন, বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে ১৬ বছর ধরে আওযামী লীগের বিচারবহির্ভূত হত্যা, গায়েবি মামলা, ও নৃশংস নিপীড়ন দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এর ফলস্বরূপ জাতিসংঘ সহ স্বীকৃত মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা নীতির মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চাপ বাড়ায়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যুক্ত ছিল – গণতান্ত্রিক প্রতিটি ব্যক্তি, দল, সংগঠন ও গোষ্ঠী তাদের সকলের আত্মত্যাগের যথাযথ স্বীকৃতি না দিলে তা হবে ইতিহাসের প্রতি অবিচার। সকল শ্রেণী-পেশা-মতের মানুষের অংশগ্রহণকে সম্মান জানিয়ে, জনগণের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সেই পথযাত্রায় ও রাষ্ট্র সংস্কারে, বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন করে গড়ে তুলতে হবে একটি নিরাপদ ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ, যেখানে প্রতিফলন ঘটবে জনগণের আকাঙ্খা ও প্রত্যাশার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ।