চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতৃত্বে আসছেন কারা?


একুশে প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কমিটি বিলুপ্তির পর দলের তৃণমূলে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা এবং গুঞ্জন চলছে। দলের হাই কমান্ডের উপর আস্থা রেখে কারা আসবেন নতুন নেতৃত্বে, এবং তারা কীভাবে দলের ভেতরের পরিস্থিতি সামাল দেবেন—এসব প্রশ্ন এখন কর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্তের পর থেকেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। নতুন কমিটি যেকোনো মুহূর্তে ঘোষণা হতে পারে, তাই নেতা হওয়ার দৌড়ে প্রার্থীরা ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ছুটছেন এবং তাদের সমর্থন লাভের চেষ্টা করছেন। বর্তমানে সভাপতির পদ এবং সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিবের পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম নিয়ে দলীয় মহলে নানা আলোচনা চলছে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতির পদে আলোচনায় আছেন অন্তত পাঁচজন প্রার্থী। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন: জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব আলী আব্বাস, সাবেক সহ-সভাপতি আলহাজ্ব ইদ্রীস মিয়া ও সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন।

সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব পদে এগিয়ে আছেন অন্তত চারজন প্রার্থী: তারা হলেন- সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লেয়াকত আলী, বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র এবং সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম হোছাইনী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আসহাব উদ্দিন চৌধুরী ও বিলুপ্ত কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান।

এছাড়া, আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিনের নামও সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিতর্কও রয়েছে, যেমন এস আলম গ্রুপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সম্পর্ক নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।

দলের তৃণমূল কর্মীরা চান, নতুন নেতৃত্বে আসুক এমন কেউ যিনি সত্যিকারের দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাসিন্দা এবং যারা বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। দলের কর্মীদের মতে, অতীতে যারা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদেরই নেতৃত্বে আসা উচিত। তারা মনে করেন, বিতর্কিত বা হাইব্রিড নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করলে তা তৃণমূলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না এবং দলের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।

এদিকে নেতৃত্বের দৌড়ে থাকা প্রার্থীদের মধ্যে লবিং করতেও পিছিয়ে নেই কেউ। সাবেক সাংসদ গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল এবং সরওয়ার জামাল নিজামও সভাপতির পদে লবিং করছেন বলে জানা গেছে। তবে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে কিছু নেতাকর্মীর অসন্তোষ রয়েছে।

সাবেক ছাত্রদল নেতা শাখাওয়াত জামান দুলাল এবং নাজমুল মোস্তফা আমিনও সাধারণ সম্পাদক পদে লবিং করছেন। এছাড়া, পটিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. খোরশেদ আলম এবং মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পার নামও আলোচনায় রয়েছে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে, যেখানে জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি এবং শেখ মো. মহিউদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। এরপর ২০১১ সালে পুনর্গঠন করা হয় এবং জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি এবং গাজী শাহজাহান জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এই কমিটি দীর্ঘ আট বছর পাঁচ মাস দায়িত্ব পালন করার পর ২০১৯ সালের অক্টোবরে বিলুপ্ত করা হয়।

এরপর, ২০২৩ সালের ৭ মে বিলুপ্ত কমিটির ৪ নং সদস্য এনামুল হক এনামকে ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। তবে এস আলম গ্রুপের গাড়ি সরিয়ে নেয়ার অভিযোগে এনাম তার প্রাথমিক সদস্য পদ হারান, যার ফলে সম্ভাব্য কমিটিতে তার জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায়।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতৃত্বের প্রশ্নে যে উত্তেজনা এবং বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা দলের ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দলের তৃণমূল কর্মীরা যেসব দাবী করছেন, তা নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তৃণমূল কর্মীদের মতে, আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় নেতাদেরকে নেতৃত্বে আনলে দলের ঐক্য এবং শক্তি বজায় থাকবে। বিতর্কিত এবং স্বার্থপর নেতাদের নেতৃত্বে আনা হলে দলের অভ্যন্তরীণ বিভক্তি এবং হতাশা আরও বৃদ্ধি পাবে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নতুন নেতৃত্ব কেমন হবে, তা নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। দলের হাই কমান্ড কাদের উপর আস্থা রাখবে এবং নতুন নেতৃত্ব কীভাবে দলের সংকট মোকাবেলা করবে, তা আগামী দিনের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। তৃণমূলের প্রত্যাশা, নতুন নেতৃত্ব দলের জন্য সঠিক পথ নির্দেশ করবে এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের রাজনীতিতে বিএনপিকে আরও শক্তিশালী করবে।