ঢাকা : বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদকে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন একটি গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দলের পক্ষ থেকে তাকে তিন দিনের মধ্যে এই ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে এই নোটিশ জারি করা হয়।
গত বুধবার (২৮ আগস্ট) সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজারের পেকুয়া যাওয়ার পথে এস আলম গ্রুপের একটি গাড়ি ব্যবহার করেন। এই গাড়িটি চট্ট মেট্রো ঘ-১১-১৫৩৩ নম্বরের মিতসুবিশি স্টেশন ওয়াগন, যা এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্টের নামে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষে (বিআরটিএ) নিবন্ধিত। গাড়িটি ব্যবহার করার সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদও।
ঘটনাটি প্রকাশিত হওয়ার পর সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার গুলশানে নিজের বাসভবনে একটি সংবাদ সম্মেলনে সালাহউদ্দিন আহমেদ এই গাড়ি ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তিনি এই ঘটনাকে ‘অসাবধানতা ও অনিচ্ছাকৃত ভুল’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং দুঃখপ্রকাশ করেন। তিনি জানান, “গাড়ি সংক্রান্ত যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। একটি পুরাতন গাড়ি, যা আমার ছোট ভাই নিয়ে গেছে, সে খুব আনন্দিত ছিল যে আমি তার গাড়িতে উঠেছি। তবে যদি আমি জানতাম যে, এটি একটি কোম্পানির গাড়ি, তাহলে আমি আরও সাবধানতা অবলম্বন করতাম।”
তিনি আরও বলেন, “এই অসাবধানতা এবং অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য যদি আমি দেশবাসীর মনে কষ্ট দিয়ে থাকি এবং তাদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকি, তবে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ দীর্ঘ এক দশকের বিরতির পর তার জন্মস্থান কক্সবাজারের পেকুয়া সফরে যান। এই সফরটি ছিল একটি স্মরণীয় ঘটনা, যেখানে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী তাকে স্বাগত জানাতে রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এই সফরের সময় তিনি বিভিন্ন সংবর্ধনা সভায় অংশ নেন এবং নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, তিনি এস আলম গ্রুপের গাড়িটি ব্যবহার করে এই সফরটি সম্পন্ন করেন, যা পরবর্তীতে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকায় নিখোঁজ হন। এই নিখোঁজের ঘটনাটি সেই সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে, ১১ মে ২০১৫ সালে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে তাকে ‘উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা’ করার সময় আটক করে শিলং পুলিশ। তার নামে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর, শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর, সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
এস আলমের গাড়ি-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে বিএনপির মধ্যে কিছু বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ও ভাবমূর্তি রক্ষায় বিএনপি এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। সালাহউদ্দিন আহমেদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া এবং তার জবাব চাওয়া হয়েছে, যা দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে।
বিএনপি এই ঘটনার মাধ্যমে দলীয় নেতাদের সতর্ক বার্তা দিতে চায়, যাতে ভবিষ্যতে এমন কোন ঘটনা পুনরায় না ঘটে যা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে।