রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

মামলার বোঝা: আদালতে ৪৩ লাখ মামলা, বিচারক মাত্র দুই হাজার

বিচার বিলম্বের কারণে জনগণের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা

প্রকাশিতঃ ৩০ অগাস্ট ২০২৪ | ২:১৪ অপরাহ্ন


একুশে প্রতিবেদক : ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকা থেকে তৎকালীন সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ পাঁচজনকে অপহরণ করা হয়। ঘটনা দেখে ফেলায় নারায়ণগঞ্জের আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিমকেও অপহরণ করা হয়।

তিন দিন পর, শীতলক্ষ্যা নদীতে সাতজনের লাশ পাওয়া যায়। এই ঘটনার পর হওয়া দুই মামলায় ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের আদালত ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন।

২০১৭ সালের ২২ আগস্ট, আপিলের রায়ে ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট এবং অপর ১১ আসামির দণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া ৯ আসামির দণ্ড বহাল থাকে। সাত খুনের মামলাটি গত সাত বছর ধরে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু এই মামলা নয়, আরও অনেক মামলা সাক্ষ্যগ্রহণের অভাবে বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে। মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্বের প্রধান কারণগুলো মধ্যে রয়েছে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ, দেরিতে তদন্ত রিপোর্ট প্রদান, এবং সাক্ষী হাজির না হওয়া। ফলে, দিন দিন বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বাড়ছে।

সুপ্রিমকোর্ট সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে সারা দেশের আদালতগুলোতে (সুপ্রিমকোর্টসহ) মামলার সংখ্যা ছিল ৩৬ লাখ। বর্তমানে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ লাখের কাছাকাছি। এই ৪৩ লাখ মামলা নিরসনে দেশের অধস্তন আদালতগুলোয় বিচারক রয়েছেন মাত্র দুই হাজার। আর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে ৬ জন এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৭৫ জন বিচারপতি রয়েছেন।

পাঁচ বছরে মামলা বেড়েছে ৭ লাখ। বর্তমানে সারা দেশের আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ঝুলে আছে ৪২ লাখ ৮৭ হাজার ৫০৪টি মামলা। এর মধ্যে অধস্তন আদালতে বিচারাধীন ৩৭ লাখ ১৭ হাজার ৫০৪টি মামলা এবং সুপ্রিমকোর্টে ৫ লাখ ৭০ হাজার মামলা রয়েছে।

বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের রিভিউ, পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎ হত্যা, পিলখানা হত্যা, শিশু রাজিব ও রাকিব হত্যা, এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা।

হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে নুসরাত জাহান রাফি হত্যা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, হলি আর্টিজান হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান হত্যা, আবরার হত্যা এবং রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলা।

মামলাজট নিরসনে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিকে জোরদার করার তাগিদ দিয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তিনি বলেন, “জট নিরসনে দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। রাষ্ট্রপক্ষকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আদালতের বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলাজট কমিয়ে আনা সম্ভব। এ লক্ষ্যে আইনও সংশোধন করা হয়েছে, তবে কাঙ্ক্ষিত সুফল এখনো মেলেনি।”

মামলাজটের কারণে বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে এবং দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ প্রয়োজন। মামলাজট নিরসনে আইন সংশোধনসহ বিকল্প পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।