দিয়াজ হত্যা মামলার আসামিরা জড়িত কিনা সেটা তদন্ত সাপেক্ষ : আদালত

চট্টগ্রাম: ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় তার মায়ের করা হত্যা মামলার আসামিরা ঘটনায় জড়িত কিনা সেটা তদন্ত সাপেক্ষ বিষয় বলে উল্লেখ করেছে আদালত।

গত ২৩ অক্টোবর ওই মামলাটি থানায় ‘এফআইআর’ হিসেবে নিতে করা রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে দেয়া আদেশে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা জজ মো. নূরে আলম এই তথ্য উল্লেখ করেন।

আদেশে বিচারক লিখেছেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের দেওয়া ময়নতদন্ত প্রতিবেদন দেখে প্রতীয়মান হয় যে, ভিকটিম দিয়াজ ইরফান চৌধুরীকে আঘাতপূর্বক হত্যা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে অভ্যন্তরীন কোন্দল ও অন্যান্য কারণে এই হত্যাকান্ড সংগঠিত হয় মর্মে প্রাথমিকভাবে তদন্তে (সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন) প্রতীয়মান হয়। অভিযোগে বর্ণিত আসামিগণ কর্তৃক অত্র হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে কিনা ইহা চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষ বিষয়।’

অাদালতের আদেশের পর গত ২৬ অক্টোবর মামলাটি হাটহাজারী থানায় এফআইআর হিসেবে রেকর্ড হয়েছে; মামলায় দিয়াজকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

হাটহাজারী থানার ওসি বেলাল উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এফআইআর হিসেবে মামলাটি নেওয়ার জন্য আদালতের দেয়া আদেশটি গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় থানায় এসে পৌঁছায়। এর চার ঘন্টা পর মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তের জন্য থানার পরিদর্ক (তদন্ত) জহিরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’

এদিকে দিয়াজের মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করে আসছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা (সিআইডি); মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির সরকার একুশে পত্রিকাকে বলেন, একই বিষয়ে দুই জায়গায় দুটি তদন্ত চলতে পারে না। হাটহাজারী থানায় দায়েরকৃত মামলাটি মূখ্য মামলা, জিআর মামলার গুরুত্ব বেশী। আমরা যেটা তদন্ত করছি, সেটা সিআর মামলা। এই মামলা একসময় শেষ হয়ে যাবে। যা পাব সেটা আদালতে পাঠিয়ে দিয়ে তদন্ত শেষ করে দেব। ওই তদন্ত প্রতিবেদনটি মূল মামলার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে।’

ঘটনার সঙ্গে আসামিদের কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে কিনা প্রশ্নে সিআইডি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির সরকার বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি এখনো। কোথায়, কে জড়িত আছে, অথবা নেই তা দেখছি। এখনই ফলাফল দেওয়া যাচ্ছে না। তদন্ত তো এখনো শেষ করিনি, কিভাবে বলবো?’

এর আগে গত বছরের ২০ নভেম্বরে দিয়াজের লাশ উদ্ধারের পর দিয়াজের পরিবার দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণকাজের দরপত্র নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম ময়নাতদন্তের পর ২৩ নভেম্বর চিকিৎসকরা আত্মহত্যার কথা বলেন। ওই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা জাহেদা আমিন বাদী হয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরে আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য দিয়াজের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়।

এর আগে দিয়াজ খুনের অভিযোগ এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করার জন্য চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে একাধিকবার আবেদন করা হয়; সে সময় আবেদন খারিজ করে দিয়ে এ নিয়ে জজ আদালতে রিভিশন করার পরামর্শ দেয় আদালত।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই ছাত্রলীগ নেতার দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার চিকিৎসকের বরাত দিয়ে গত ৩০ জুলাই সিআইডি সর্বপ্রথম জানায়, দিয়াজের মৃত্যু শ্বাসরোধজনিত হত্যাকান্ড। তবে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

দিয়াজের মৃত্যু-রহস্য এখনো উন্মোচন হয়নি। এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণকাজের দরপত্র নিয়ে বিরোধ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়ুয়া এক মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে দিয়াজের জটিলতা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে।