দেশজুড়ে নজিরবিহীন সংঘাত, নিহত শতাধিক


ঢাকা : নজিরবিহীন গুলি, সংঘাত, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের গতকাল রোববার অগ্নিগর্ভ ছিল রাজধানীসহ সারাদেশ। এতে এক সাংবাদিক ও ১৪ পুলিশ সদস্যসহ নিহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। আন্দোলন ঘিরে গত কয়েক দিনে এ নিয়ে মোট নিহত হয়েছেন তিন শতাধিক।

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে দিনভর আওয়ামী লীগ সমর্থক ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। বেশ কয়েক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি এবং দলীয় কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতাল, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২৭টি থানা-ফাঁড়ি, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, রেঞ্জ অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। সংঘর্ষে জড়িত অনেকের হাতে লাঠিসোটা ও আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীনদের অন্তত ৩৫ কার্যালয়ে ভাঙচুর শেষে পুড়িয়ে দিয়েছে। বিপরীতে বিএনপির দুটি কার্যালয়ে আগুন দেয় সরকার সমর্থকরা।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ সোমবার থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শনিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, আজ কারফিউ ভাঙলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সোমবার থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ এবং সারাদেশের নিম্ন আদালত বন্ধ ঘোষণা করেছে কোর্ট প্রশাসন। দেশের সব তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বিজিএমইএ।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে আজ সোমবার করার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীসহ সব অভিভাবককে ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছে সরকার।

রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, প্রগতি স্মরণি, উত্তরা, মিরপুর, শাহবাগ, বাংলামটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, পুরান ঢাকা, যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ছিল উত্তাল। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মীর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) হামলার পর ১৩টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে আন্দোলনকারীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার কোনো কোনো এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও আন্দোলনকারীর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সংঘাত হয়। রাজধানীর রামপুরাসহ কয়েকটি এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ, বাংলামটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেটে জড়ো হয়। এসব এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে।

রোববার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকায় এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

ঢাকার বাইরে নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ ২৭, লক্ষ্মীপুরে ১১, ফেনীতে ৮, নরসিংদীতে ৬ আওয়ামী লীগ নেতা, সিলেটে ৬, কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের তিনজনসহ ৫, রংপুরে ৫, মাগুরায় ৪, বগুড়ায় ৫, মুন্সীগঞ্জে ৩, পাবনায় ৩, কুমিল্লায় পুলিশসহ ৩, শেরপুরে ৫, জয়পুরহাটে ২, ভোলায় ৩ জন, বরিশালে এক আওয়ামী লীগ নেতা, গাজীপুর, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, টাঙ্গাইলে ও হবিগঞ্জে একজন করে রয়েছেন। ঢাকার পাশের কেরানীগঞ্জে এক আওয়ামী লীগ নেতা, সাভারের আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে একজন করে নিহত হয়েছেন।