তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম


কেশব কুমার বড়ুয়া : আজাদ ভাইয়ের মতো গুণী সাংবাদিকের সাথে পরিচয়ের সেই দিনগুলো আজ অস্পষ্ট হলেও, মনের কোণে ঠিকরে ওঠে অফুরন্ত স্মৃতি। আমার কর্মস্থলে গেলেই তাঁর সঙ্গে দেখা হতো, আজাদ ভাইয়ের সাথে দেখা মানেই ছিল আন্তরিকতার বন্যা, কথার ফুলঝুরি।

একুশে পত্রিকার আবির্ভাবের পর থেকেই আমি তাঁকে চিনেছি এক নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিক হিসেবে। অন্যায়ের সামনে মাথা নত করার মানুষ ছিলেন না আমার আজাদ ভাই। সবসময় সত্য উন্মোচনের দুরূহ পথ বেছে নিতেন, সংবাদের গভীরে লুকিয়ে থাকা সত্যকে তুলে আনতেন বুকের পাটা দিয়ে।

দেখা হলেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেন, ‘দাদা, আমার পত্রিকার জন্য একটু অন্যরকম, একটু সাহসী খবর জোগাড় করবেন? অন্য কেউ যা ছাপতে পারেনি, সেই খবর। পত্রিকার মেইলের পাশাপাশি আমার মেইলেও পাঠাবেন। আমি নিজের চোখে দেখব আপনার সেই মূল্যবান খবর।’

আজাদ ভাইয়ের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতার আরও কারণ হলো তাঁর এক ফুফু আমাদের এলাকায় আমার এক ঘনিষ্ঠজনকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর ফুফু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। শহরে দেখা হলেই আজাদ ভাই ফুফু ও তাঁর স্বামীর কুশলাদি জিজ্ঞেস করতেন।

আজাদ ভাই যখন একাত্তর টিভিতে কাজ করতেন, তখন আমার এলাকার আমার এক সহপাঠীর ভাতিজি ও তার স্বামী এক দুর্ঘটনায় মারা যান। আজাদ ভাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেই সংবাদ কভার করতে গিয়ে শুনেছিলেন যে নিহত মেয়ে ও তাঁর স্বামী আমার সহপাঠীর ভাতিজি। তিনি আমাকে খুঁজে বের করে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে একাত্তর টিভিতে সেই সংবাদ প্রচার করেছিলেন।

নির্ভীক ও একজন প্রকৃত সাংবাদিক যে এভাবে দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে এত কম সময়ে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন, তা ভাবতেও কষ্ট হয়। প্রতিভাধর এই সাংবাদিকের মৃত্যুতে শুধু তাঁর পরিবার নয়, আমাদের সমাজ, আমাদের জাতি, আমাদের দেশের এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

আজাদ ভাই, আপনি চলে গেছেন, কিন্তু আমাদের মাঝে রেখে গেছেন এক মহান আদর্শের আলো। যে আলো দেখাবে আমাদের সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে, সত্যের পথে নির্ভয়ে চলতে। আপনার আদর্শ আমাদের শেখাবে, অপ্রিয় হলেও সত্যকে লেখা, খবরের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সত্যকে মানুষের সামনে তুলে ধরা। আপনার আদর্শ আমাদের দেখাবে, কীভাবে চোখের সামনে অন্যায়কে তুলে ধরে সমাজকে জাগিয়ে তোলা যায়।

আজাদ ভাই, আপনি আপনার কর্মের মাধ্যমে চিরদিন বেঁচে থাকবেন সচেতন মানুষের হৃদয়ে। আপনার নীতি-নৈতিকতার আদর্শকে বুকে ধারণ করে আমরা আপনাকে যথাযথ শ্রদ্ধা জানাতে পারলে, হয়তো আপনার বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে। আমি প্রার্থনা করি, আপনার আত্মার শান্তি কামনায়, আপনার আদর্শকে অনুসরণ করার প্রত্যয় নিয়ে আমরা সবাই যেন এক হতে পারি।

লেখক : সভাপতি, হাটহাজারী প্রেস ক্লাব, চট্টগ্রাম।