সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু আজও বেঁচে আছেন আমাদের হৃদয়ে

প্রকাশিতঃ ১ অগাস্ট ২০২৪ | ৯:৪৫ পূর্বাহ্ন


সায়িমা সাফা : আগস্ট মাস এলেই বুকের ভেতর কষ্টের হাহাকার জাগে, কারণ এই মাসেই আমরা হারিয়েছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে স্তব্ধ হয়েছিল গোটা বিশ্ব। যাঁকে পাকিস্তানিরা হত্যা করতে পারেনি, তাঁকেই সপরিবারে হত্যা করলো বিশ্বাসঘাতকেরা।

এই ঘটনা বাঙালি জাতিকে সারা বিশ্বের কাছে কলঙ্কিত করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশের মানুষ যেন নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে। তবে ঘাতকরা ভুল করেছিল যে, বঙ্গবন্ধুকে কেবল সশরীরে হত্যা করা গেলেও তাঁর আদর্শ ও ভাবধারাকে হত্যা করা সম্ভব নয়। তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন বাঙালি জাতির অন্তরে।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন অবিসংবাদিত নেতা, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তাঁর সংগ্রাম, সৃষ্টিশীলতা, সাহস, ত্যাগ, মহত্ত্ব ও নেতৃত্বই তাঁকে অমর করে রেখেছে। বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব কল্পনাই করা যায় না। তিনিই আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্রষ্টা। তাই বলা যায়, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে অস্থিরতা ও নৈরাজ্যের সূচনা হয়, তার ক্ষত এখনও শুকায়নি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতার যে স্বপ্ন দেখেছিল বাঙালি জাতি, তা আজও অধরা রয়ে গেছে। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, বৈষম্য, দুর্নীতি এখনও আমাদের সমাজের বড় সমস্যা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে যদি আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম, তবে হয়তো আজ অনেক দূর এগিয়ে যেত বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর দুই কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার কাঁধে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। তবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে এখনও অনেক পথ বাকি।

আজ আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া। তাঁর আদর্শকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, বৈষম্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা। তবেই বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে। তবেই আমরা বলতে পারব, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আজ সার্থক।

আমরা জানি, বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। সামরিক শাসন এবং একের পর এক অভ্যুত্থান দেশকে পিছিয়ে দেয়। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী।

তবে বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা ভুলেনি। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারের পতন ঘটে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংকল্প গ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যেও সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বৈষম্য, দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা এখনও সমাজে বিদ্যমান। এসব সমস্যা মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হবে। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই আমরা সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারব।

লেখক : সাংবাদিক।