চট্টগ্রাম: ওমরগণি এমইএস কলেজ থেকে ১৯৯৮ সালে ডিগ্রি পাশ করেন তিনি। সেসময় ছাত্রনেতাও ছিলেন; পরে কোন্দলের কারণে ছাত্র রাজনীতি ছেড়ে অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন গোলাম সরওয়ার মিলন।
১৯৯৯ সাল থেকে নগরীতে ছিনতাইয়ের পাশাপাশি খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ঘটনায় মিলনের সম্পৃক্ততা পেয়ে আসছে পুলিশ। তার দলের সদস্যরা ‘সাইলেন্ট কিলিং’ করে চট্টগ্রাম নগরকে আতংকের নগরে পরিণত করেছে। চট্টগ্রাম নগরের অপরাধ জগতের অন্যতম নিয়ন্ত্রক বলে বিবেচনা করা হয় তাকে।
দুর্ধর্ষ এই অপরাধীকে শনিবার রাতে নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন দেওয়ানহাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে একটি এক নলা বন্দুক ও ৫ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। আত্মগোপনে থাকা মিলন ডবলমুরিং থানার পাশেই ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পেশাদার অপরাধীদের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে গোলাম সরওয়ার মিলন। নগরীর আকবর শাহ, পাহাড়তলী, হালিশহর, খুলশী, বন্দর, পতেঙ্গা ও সদরঘাট এলাকায় বেশী সক্রিয় তার অনুগত সন্ত্রাসীরা। এসব এলাকায় ছিনতাইসহ পেশাদার অপরাধীদের বেশীরভাগ কর্মকাণ্ডই পরিচালিত হয় মিলনের ইশারায়।
মিলনের উত্থান সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওমরগণি এমইএস কলেজ থেকে ১৯৯৮ সালে ডিগ্রি পাশ করা মিলন সেসময় ছাত্রনেতাও ছিলেন। পরে কোন্দলের কারণে ছাত্র রাজনীতি ছেড়ে ১৯৯৯ সালে সন্ত্রাসী পেশা বেছে নেন মিলন। যোগ দেন শীর্ষ সন্ত্রাসী কানা বক্করের গ্রুপে। এক পর্যায়ে নানা বিষয় নিয়ে বক্করের সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হলে সন্ত্রাসীদের নিয়ে আলাদা দল গঠন করে মিলন। ২০০২ সালে গঠন করা এ দলে ছিল শুরুর দিকে ১২ জন সদস্য। এরপর থেকে নগরীর বেশিরভাগ অংশের অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে তার অনুগতরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে পাঁচলাইশ থানার একটি অস্ত্র মামলায় মিলন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ওই মামলায় খালাস পেয়ে ২০০৪ সালে জেল থেকে বেরিয়ে আসে। ২০০৬ সালে মিলনসহ কয়েকজন ছিনতাইকারী মিলে হামকা গ্রুপ গঠন করে। এরপর থেকে নগরবাসীর আতঙ্কে পরিণত হয় এ ছিনতাই চক্র।
এ গ্রুপের হাতে চট্টগ্রামের মেধাবী ছাত্র শাওন, বিআরটিএ কর্মকর্তা প্রীতি রঞ্জন চাকমা, আইনজীবী দ্বীন মোহাম্মদসহ প্রায় ১১ জন সাইলেন্ট কিলিংয়ের শিকার হন। প্রথম দিকে নান্টু হামকা গ্রুপের নেতৃত্বে ছিল। ২০১১ সালে নান্টু গ্রেফতার হলে মিলন গ্রুপটির একাংশের নেতৃত্বে আসে। ২০০৮ সালে ছিনতাইকালে পুলিশের গুলিতে আহত অবস্থায় ধরা পড়ে। ২০১০ সালে জামিনে বেরিয়ে আসার পর থেকে অপরাধ কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিতে পারে না মিলন।
পায়ে রড লাগানোর কারণে তার হাঁটতে কষ্ট হয়। তবে তার নির্দেশে অনুসারীরা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে ছিনতাই ও নানা অপরাধ করে। ২০১২ সালের ১ এপ্রিল হালিশহর থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় গোলাম সরওয়ার মিলন। এর কিছুদিন পর জেল থেকে বেরিয়ে ফের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে এই শীর্ষ সন্ত্রাসী।
২০১৪ সালের ৩০ জুন সদরঘাট থানার মোগলটুলি বাজার থেকে সন্ত্রাসী কানা মান্নানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নগরীর কমার্স কলেজ কেন্দ্রিক এ সন্ত্রাসীর শরীর থেকে হাতের কব্জি কেটে বিচ্ছিন্ন করে নৃশংস কায়দায় তাকে খুন করা হয়। এ ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কানা মান্নানকে খুন করে গোলাম সরওয়ার মিলন।
ডবলমুরিং থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘হামকা গ্রুপের একাংশ মিলনের নেতৃত্বে সাইলেন্ট কিলিং করে পুরো নগরীকে আতঙ্কের নগরীতে পরিণত করেছিল।’
‘বর্তমানে মিলনের গ্রুপে ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য আছে। সে বিভিন্ন ছিনতাইকারী গ্রুপগুলোকে অস্ত্র সরবরাহসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতা করে। বেশকিছু খুনের ঘটনায়ও সে জড়িত, টাকার বিনিময়ে সে এসব খুনের ঘটনায় ভূমিকা রাখে।’
ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘মিলন জানিয়েছে তার বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা রয়েছে। আমরা আপাতত ৬টি মামলার তথ্য পেয়েছি। তাকে রোববার আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মো. নোমান তিনদিন রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন।’