ঢাকা : সময়টা তিন এপ্রিল ২০১৬। স্থান ডেনমার্কের কোপেনহেগেন। বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার হলরুমটি সাজানো হয়েছে একটু অন্যভাবে, বাঙালিয়ানায় ঠাঁসা। ভিনদেশে থেকেও কাপড়ে-খাবারে, গানে, কল্পনায় পুরো বাঙালি ভাবতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন যিনি, সেই হিল্লোল বড়–য়ার আয়োজন এমন হবে তা তো স্বাভাবিক! হ্যাঁ, মেয়ের জন্মদিনে ক্ষণিকের জন্য বাংলাদেশি সবাইকে বাঙালিয়ানায় ভরিয়ে দিতে সেদিন সব চেষ্টায় করেছিলেন হিল্লোল।
তার সেই চেষ্টার ষোলকলা পূর্ণ করেন আরেফিন সাদ নামের এক কণ্ঠবাজ, সুরবাজ তরুণ। আর সেটি করেছেন বাংলা গানের এক অনবদ্য পরিবেশনা দিয়ে। সত্যিকারের শিল্পিত চর্চা, পরিবেশনার সেই অনুষ্ঠানে নতুন যারা ছিলেন তারাও নতুন করে কৌতূহলী হয়ে উঠেন সাদ প্রসঙ্গে।
হ্যাঁ, আরেফিন সাদ ডেনমার্ক, সুইডেন প্রবাসী বাঙালিদের কাছে গানের মানুষ, সুরের মানুষ হিসেবে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। যেখানেই বাঙালি আয়োজন, বাঙালি সংস্কৃতির বুনণচেষ্টা, সেখানেই শিল্পী আরেফিন সাদ যেন অপরিহার্য। সুইডেন, ডেনমার্কে প্রায়সব বাঙালি ও বাংলাদেশ-উৎসবের প্রাণের গায়ক আরেফিন সাদ।
আরেফিন সাদ’র বাড়ি গাজিপুর হলেও বাবার চাকরি সূত্রে ঘুরে বেড়িয়েছেন পথে-প্রান্তরে। বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম শহরের কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে। আগ্রাবাদের হাতেখড়ি হাই স্কুল ও বিএফ শাহীন কলেজে পড়ার সময়ই পুরোদস্তুর গায়ক সাদ। ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র যখন, তখনই তার গাওয়া ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’ শোনার পর কেউ বিশ্বাস করতে চাইতেন না গানটি কুমার বিশ্বজিত ছাড়া অন্য কেউ করছে! কুমার বিশ্বজিতের মতো গানটি অবিকল গাইতে পারতেন আরেফিন সাদ। মূলত সংগীতের প্রতি সাদ’র অনুরাগ, প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা পারিবারিক সূত্রে। মা রেজিনা লাইসও সুরে সুরে কাটিয়েছেন ’৮৫ থেকে ’৯৫।
স্বামীর কর্মস্থল সুবাদে এই দশটি বছর কক্সবাজারের মানুষকে সুরে ভাসিয়েছেন তিনি। এমন সুরেলা মা-র ছেলে সুরে থাকবেন, সুরে মাতাবেন তা-ই তো স্বাভাবিক-বলেন সাদভক্তরা।
কিন্তু সংশয়টা তৈরি হয়েছিল সুইডেনের মালমো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরই। স্বজন-শুভার্থীদের সংশয়-শঙ্কা-সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে গিয়ে সাদ’র সুর চর্চাটা বোধহয় সত্যিকারের গোল্লায় যাবে! কিন্তু না! আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মতো সাবজেক্টে পড়েও সংগীত ছাড়েননি সাদ। সংগীতসাধনা করে চলেছেন প্রার্থনার মতো করে।পড়াশোনার ফাঁকে স্টেজ শো করছেন ইউরোপে ঘুরে ঘুরে।
সাদ নিজেই গান লিখেন, সুর করেন। রয়েছে ৫-৬ টি মৌলিক গান। অসাধারণ এক মিউজিক ভিডিও তৈরি করছেন নিজের লেখা গান ও সুরে। বাল্টিক সাগরের নয়নাভিরাম দৃশ্যে সেই মিউজিক ভিডিওতে বাঙালি রমণীর অভিনয় করেছেন সুইডেনেরই এক সুদর্শনা। সেই ভিডিওটি করতে গিয়ে বাল্টিক সাগরের মাঝে তিনি ফিরে পেয়েছেন কর্ণফুলীর ঢেউ, যে ঢেউ তার কাছে ধরা দিয়েছিল কখনো সুর, কখনো গান হয়ে। যেখানেই যান আরেফিন সাদ আজীবন সেই সুরে, সেই গানেই থাকতে চান খাঁটি বাঙালি হয়ে।