রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা দেখাচ্ছে জুয়েলারি শিল্প

প্রকাশিতঃ ২৮ জুন ২০২৪ | ১০:২৬ অপরাহ্ন

শরীফুল রুকন : দেশের জুয়েলারি শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল সম্ভাবনায় ভরা; স্বর্ণ কারিগরদের দক্ষতা, ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং রপ্তানির সুযোগ এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে একদিকে জুয়েলারি খাতে দক্ষ কারিগরদের অভাব নেই, অন্যদিকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থানের সাথে সাথে জুয়েলারির জন্য চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে তৈরি জুয়েলারির উচ্চ চাহিদা রয়েছে। সরকার জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নের জন্য নীতিমালা করেছে, নিচ্ছে আরও নানা উদ্যোগ। এসব কারণে অতিরিক্ত ভ্যাট-ট্যাক্সের মতো কিছু চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এই খাত দেশের অর্থনীতিকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা দেখাচ্ছে।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি, ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবম বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে জুয়েলারি শিল্পের মতো বিকল্প উৎসগুলো গ্রহণ করা একমাত্র উপায় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

স্বর্ণের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে। স্বর্ণের বাজারে সাময়িক ওঠানামা থাকলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ফলে স্বর্ণ ক্রেতার লোকসান হয় না। মূলত স্থিতিশীলতা ও নির্ভরযোগ্যতার কারণেই সব মানুষের পছন্দের ধাতু হয়ে উঠেছে স্বর্ণ। নানা কারণে স্বর্ণের দাম ক্রমাগত বেড়ে চললেও বিশ্বজুড়ে এই ধাতু কেনার হার কিংবা চাহিদা কমেনি।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের (বাজুস) তথ্যমতে, ১৯৭০ সালে ১৫০ টাকায় পাওয়া যাওয়া প্রতি ভরি গিনি স্বর্ণের দাম ১০ বছরের ব্যবধানে ১৯৮০ সালে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫০ টাকায়; যেখানে বৃদ্ধির হার ২১৩ শতাংশ। এর পরবর্তী ১০ বছরে আরও দুইগুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৬ হাজার ৪০০ টাকা।

২০০০ সালে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ৬ হাজার ৮০০ টাকা। সে হিসেবে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল ১০ বছরে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পায় মাত্র ৪০০ টাকা। বলা চলে এ সময়ে স্বর্ণের মূল্য অনেকটা স্থিতিশীল ছিল। ২০১০ সালে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ৩৬ হাজার ১০০ টাকা। অর্থাৎ ২০০০ সালের পরবর্তী ১০ বছরে আরেক দফা লাফ দেয় স্বর্ণের দাম। ভরি প্রতি দর বাড়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। বৃদ্ধির হার প্রায় ছয়গুণ।

বাজুসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিশ্ব বাজারে অস্থিরতার কারণে ২০০৯ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়ায় ৫৯ হাজার ৮৭৪ টাকায়। এরপর থেকে আবার কমতে থাকে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এসে হয় ৪১ হাজার ২৭৬ টাকা। এরপর ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০২০ সালের মার্চ মাসে এসে মূল্য দাঁড়ায় ৬০ হাজার ৩৪০ টাকা।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের বাজারে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ৬১ হাজার ৫২৮ টাকা। ২০২৩ সালে জুনে এক ভরি স্বর্ণের অলংকার কিনতে লেগেছিল ৯৮ হাজার ৪৪৪ টাকা। বর্তমানে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণ কিনতে লাগছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৫৫ টাকা।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৫০ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, স্বর্ণই একমাত্র ধাতু, যার মূল্য সময়ে সময়ে ওঠানামা করলেও সামগ্রিকভাবে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে ধারাবাহিকভাবে মানুষের বিনিয়োগ ভাবনায় স্বর্ণই সবসময় শীর্ষে থেকেছে। কারণ, স্বর্ণের মতো মূল্যবান ধাতু কেবল অতিরিক্ত মূল্যই ধরে রাখে না, সরবরাহ চাহিদা ব্যবস্থা স্বর্ণের মূল্যমানে বিশাল প্রভাব ফেলে৷’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীলনকশায় বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ডলার স্বর্ণের স্থান দখল করে নেয়। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থ ব্যবস্থায় অতিষ্ঠ হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সম্মিলিতভাবে ডলারকে সরিয়ে স্বর্ণের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে এখন উঠেপড়ে লেগেছে। সরকারি ভল্ট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোতে স্বর্ণের রিজার্ভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব কারণে স্বর্ণের মূল্যমান ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।’

অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে মুদ্রা ও মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে স্বর্ণের পরীক্ষিত ভাবমূর্তি আছে। এবং সৌন্দর্য, ইলেকট্রনিকস ও ওষুধ শিল্পে স্বর্ণের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এটা স্পষ্ট, স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতুনির্ভর আর্থিক কার্যক্রম আরও শত শত বছর বিশ্বব্যাপী রাজত্ব করবে। বাংলাদেশ সেই রাজত্বে কীভাবে জায়গা করে নেবে, সময়ই তা বলে দেবে। তবে ওই রাজত্বে বাংলাদেশ আজকের মতো হতশ্রী অবস্থায় টিকে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যে আমাদের ক্ষমা করবে না, সে কথা নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর চেয়ারম্যাান ড. এম এম আকাশ বলেন, ‘বিশ্বের সব উন্নয়নশীল দেশ বর্তমানে স্বর্ণ কেন্দ্রিক আর্থিক ও পুঁজিবাজার তৈরি করছে। এর পেছনে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী ডলার সংকট দেখা দিয়েছে, যা অনেক দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হুমকির মুখে ফেলেছে। এ ছাড়া বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেমন ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, চায়না, জাপান এমনকি আমাদের পাশের ভারত স্বর্ণের রিজার্ভ তৈরি করেছে; যা তাদের অর্থনীতি স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা রাখছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ সালে বিশ্বের সপ্তম রপ্তানিকারক পণ্য ছিল স্বর্ণ, যার আর্থিক মূল্য ৪৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বিশ্ববাণিজ্যে যার অবদান ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের স্বর্ণের রিজার্ভ বাড়াচ্ছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্যমতে, ২০২২ সালে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ১ হাজার ১৩৬ টন স্বর্ণ রিজার্ভ করেছে, যার বাজারমূল্য ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’

২০২১ সালে বিশ্ববাজারে ২৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের স্বর্ণের অলংকার রপ্তানি বাণিজ্য হয়েছে। যার মধ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অবদান ছিল ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ এবং শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অবদান ছিল ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। তার মধ্যে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্বর্ণ রপ্তানিকারক দেশ ছিল সুইজারল্যান্ড (৮৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং সর্বোচ্চ আমদানিকারক দেশও ছিল সুইজারল্যান্ড (৮৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)৷ অন্যদিকে ২০২১ সালে তৈরি পোশাকশিল্পের বৈদেশিক রপ্তানি বাণিজ্য ছিল প্রায় ৭০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের৷ বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে স্বর্ণের অলংকার শিল্প খাত।

২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৭৪০ টন। বিশ্বের সর্বোচ্চ স্বর্ণের অলংকার ভোক্তা ১০টি দেশের মধ্যে ভারত ও চীন অন্যতম। এবং এশিয়া মহাদেশের ছয়টি দেশ এ তালিকায় অবস্থান করছে। অন্যদিকে স্বর্ণের অলংকার রপ্তানিতে বিশ্বের ১০টি দেশের মধ্যে চীন প্রথম (১২ দশমিক ৬ শতাংশ) এবং ভারত তৃতীয় অবস্থানে (১০ দশমিক ৭ শতাংশ) আছে। অর্থাৎ ২০২১ সালে মোট স্বর্ণের অলংকার রপ্তানির ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ সম্মিলিতভাবে রপ্তানি করেছে চীন এবং ভারত; অর্থমূল্যে যার পরিমাণ ২৩ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

পাশাপাশি তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো নতুন অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলোও স্বর্ণের অলংকার রপ্তানিতে বিশ্ববাণিজ্যে অবদান রেখে চলেছে। দেশভিত্তিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক কোম্পানির মধ্যে ভারতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে পাচটি, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তিনটি ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক পাচটি। বিশ্বের সর্বোচ্চ স্বর্ণের অলংকার রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ রয়েছে চারটি৷ বিশ্ব রপ্তানি বাণিজ্যে তাদের অবদান যথাক্রমে ভারত (১০ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), শ্রীলঙ্কা (৬৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), নেপাল (৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ও পাকিস্তান (৬ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

সাধারণত বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের চাহিদাকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হচ্ছে- অলংকার (৫৩ শতাংশ), কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক রিজার্ভ (১৮ শতাংশ), বিনিয়োগ (১৭ শতাংশ) ও শিল্প (১২ শতাংশ)। অর্থাৎ বৈশ্বিক চাহিদার অর্ধেকের বেশি চাহিদা স্বর্ণের অলংকারের। পাশাপাশি বিশ্বে অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের স্বর্ণের রিজার্ভ বাড়াচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই দেশের স্বর্ণের বড় একটি ক্রেতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) বার্ষিক জরিপের তথ্যমতে, বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে ডলারের পরিমাণ কমছে, বাড়ছে স্বর্ণের পরিমাণ। এত দিন উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে এই প্রবণতা থাকলেও এখন উন্নত দেশগুলোও সেই পথে হাঁটছে।

২০২৫ সালে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে ১৩ শতাংশ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণের মজুত বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে বলেও জরিপে জানা গেছে। অথচ এক বছর আগেও মাত্র ৮ শতাংশ ধনী দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পরিকল্পনা ছিল। এমনকি গোল্ড কাউন্সিলের জরিপ শুরু হওয়ার পর থেকে তখন পর্যন্ত সেটিই ছিল সর্বোচ্চ।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেওয়া বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারণা, আগামী পাঁচ বছরে তাদের মজুতে স্বর্ণের পরিমাণ অনেকটাই বাড়বে। গত বছরে এমন কথা বলেছিল মাত্র ৩৮ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এখন পর্যন্ত স্বর্ণ কেনায় এগিয়ে আছে উদীয়মান অর্থনীতির কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের সময় থেকে তারাই স্বর্ণের মূল ক্রেতা।

চলতি বছর স্বর্ণের দাম যে অনেকটা বেড়েছে, তার পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই স্বর্ণ মজুতের প্রবণতা বৃদ্ধির যোগ আছে বলেই ধারণা করেন বিশ্লেষকরা। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিপুল পরিমাণ অর্থ জব্দ করায় দেশগুলোর মধ্যে এই প্রবণতা বাড়ছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ডলারের বিনিময় হার বাড়িয়ে আমদানিকারক দেশগুলোকে বিপদে ফেলেছে, সেই অভিজ্ঞতা থেকেও অনেক দেশ স্বর্ণ মজুতের দিকে ঝুঁকেছে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের রিজার্ভ বহুমুখী করছে।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের পাঁচ বছর আগে প্রথম এই জরিপ শুরু করে, এরপর প্রতিবছরই তারা সেটা করেছে। এবারের জরিপে দেখা গেছে, রেকর্ডসংখ্যক কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী ১২ মাসে স্বর্ণের মজুত বাড়াতে চায়। জরিপে অংশ নেওয়া ২৯ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ ব্যবস্থাপক এমন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন এবার। তবে উদীয়মান অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই ভাবনা ৪০ শতাংশের।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্যানুসারে, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রিজার্ভে এক হাজার টন করে স্বর্ণ যুক্ত হয়েছে। রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্যে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ডলারব্যবস্থা ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার জেরে ভারত, চীনসহ যেসব দেশের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যিক লেনদেন রয়েছে, তারা স্বর্ণ কেনায় উৎসাহিত হচ্ছে।

২০২৩ সালে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে স্বর্ণের হার ছিল ৫৫ শতাংশ, ২০০০ সালে যা ছিল ৭০ শতাংশ। এখন বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম আউন্স প্রতি ২ হাজার ৩৩৭ ডলার; গত ছয় মাসে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘দুই বছর ধরে বিশ্বের অর্থনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব স্বর্ণের বাজারেও বিদ্যমান। যার কারণে স্বর্ণের বাজার হয়ে উঠেছে অস্থিতিশীল। স্বর্ণের দাম সাধারণত তেলের দাম, মার্কিন ডলারের বিনিময়মূল্যের ওপর নির্ভর করে। কোভিড-১৯ পরবর্তী অবস্থায় স্বর্ণের বাজার দরের সূচকে বড় রকমের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে উন্নত বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণ রিজার্ভের দিকে ঝুঁকছে। পাশাপাশি ব্যালান্স অব পেমেন্ট এবং অর্থনীতি বিকেন্দ্রীকরণের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে স্বর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম। ২০২০ সালে বাংলাদেশে ৩৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আমদানি হয়েছে। যদিও হাজারো নিয়মনীতির জাতাকলে পড়ে গত দুই বছরে সোনার আমদানি শূন্যের কোঠায়। অথচ ২০২০ সালে স্থানীয় বাজারে স্বর্ণের বার, স্বর্ণের অলংকার এবং রুপার অলংকার মিলিয়ে বিক্রির পরিমাণ ২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১২ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ২০৩০ সালের মধ্যে এ বাজার ২১ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌছাবে। এর মধ্যে বড় একটি অংশ দখল করে রাখবে স্বর্ণের অলংকার৷’

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘২০২০ সালে স্থানীয় স্বর্ণের বাজারে স্বর্ণের অলংকার বিক্রি হয়েছে ২ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হারে ২০৩০ সালে এ অংক পৌঁছাবে ১৭ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ২০২০ সালে স্থানীয় বাজারে ৪২৮ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পাকা স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে। ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হারে ২০৩০ সালে এ বাজারের পরিমাণ ৩ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে।’

শেষ।