কারাগারের ছাদ ফুটো করে যেভাবে পালিয়ে যান চার কয়েদি

বগুড়া : বগুড়া জেলা কারাগারের একটি ভবনের ছাদ ফুটো করে অভিনব কৌশলে পালিয়ে যান মৃত্যুদণ্ড পাওয়া চার আসামি। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই পুলিশ তাদের পুনরায় গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে কারাগারের নিরাপত্তা নিয়েও। ঘটনা তদন্তে করা হয়েছে একটি কমিটি। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে চার কয়েদিকে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে বগুড়া জেলা কারাগারে এ ঘটনা ঘটে।

পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা চার কয়েদি হলেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গার নজরুল ইসলাম মজনু, নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার ফজরকান্দির আমির হোসেন, বগুড়ার কাহালু পৌরসভার মেয়র আবদুল মান্নানের ছেলে মো. জাকারিয়া ও বগুড়ার কুটুরবাড়ী পশ্চিমপাড়ার ফরিদ শেখ।

বুধবার (২৬ জুন) সকাল ১০টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বগুড়ার পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী এসব তথ্য জানিয়েছেন।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘দিবাগত রাত ৩টা ৫৫ মিনিটে খবর পাই বগুড়া কারাগারের একই সেল থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার কয়েদি পালিয়েছেন। পরে ৪টা ১০ মিনিটের দিকে শহরের চাষীবাজার এলাকা থেকে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে চার কয়েদি পালিয়েছিলেন তারা হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত। তারা বগুড়া জেলা কারাগারে একই সেলে ছিলেন। রাতে ওই সেলের ছাদ ফুটো করেন। ফুটো করার পর তারা বিভিন্ন বেডশিট জোড়া দিয়ে রশির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে ডিসি অফিসের দক্ষিণের শেষ সীমানা মূল গেট দিয়ে পালিয়ে যান। এ সময় তাদের পরনে কোনো কয়েদির পোশাক ছিল না। পালিয়ে গিয়ে তারা চাষীবাজার এলাকায় একত্র হন। কিন্তু সেখান থেকে পালানোর আগেই সদর থানার একাধিক টিম তাদের ধরে ফেলে। পরে তাদের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হলে কারাগার কর্তৃপক্ষ ছবির সঙ্গে মিলিয়ে কয়েদিদের নিশ্চিত করেন।

ছাদ কীভাবে ফুটো করল— এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘যে সেলে চার কয়েদি ছিলেন সেটা ব্রিটিশ আমলের তৈরি। ছাদ দেখে মনে হয়েছে এটা দুর্বল। আর তারা এটা অনেক দিনের পরিকল্পনায় বাস্তবায়ন করেছেন। বাকিটা তদন্তে উঠে আসবে।’

ডিআইজি প্রিজন কামাল হোসেন কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় ফটকে সাংবাদিকের উপস্থিত দেখে দ্রুত গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করেন। পরে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। অতিরিক্ত আইজি প্রিজন ঢাকা থেকে আসছেন। তাকে প্রধান করে কারাগার কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তবে এতে কতজন সদস্য রয়েছেন তা জানা নেই। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।’

এদিকে বগুড়া কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালানোর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে পুলিশ, র‍্যাব, কারাগারসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে।তাদের খুব দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’