রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

দখলকারীদের টাকায় খাল উদ্ধার হোক : রেহানা বেগম রানু

প্রকাশিতঃ ৬ অক্টোবর ২০১৭ | ৯:০১ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরের বেদখল খাল উদ্ধারে সরকারী অর্থ ব্যয়ের পক্ষে নন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরশেনের সাবেক কমিশনার রেহানা বেগম রানু; দখলকারীদের টাকায় খাল উদ্ধারের পক্ষে মত দিয়েছেন আলোচিত এই নারী নেত্রী।

চাক্তাই খালসহ চট্টগ্রামের ৩২টি খালের বড় অংশ দখল হয়েছে। এসব খাল উদ্ধারে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার বাজেট জাতীয় অর্থনেতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়েছে। সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করবে। ৩৬টি খালের ৫ লক্ষ ২৮ হাজার বর্গমিটার মাটি খনন এবং ৪ লাখ ২০ হাজার বর্গমিটার কাঁদা উত্তোলন করা হবে। পানি নিষ্কাশনের জন্য তৈরী করা হবে নালা। প্রায় ১০৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ হবে এক লাখ ৭৬ হাজার মিটার। জমি অধিগ্রহণ করে রাস্তা তৈরী করা হবে ৮৫ কিলোমিটার।

জলাশয়-জলাধার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক রেহানা বেগম রানু বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে যে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হবে, এই টাকা কার? জনগণের, সাধারণ মানুষের। এখন যারা খাল দখল করে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে, তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এই খাল উদ্ধার করতে হবে। জনগণের টাকায় খাল উদ্ধার করা উচিত হবে না। এই টাকা আদায়ের মাধ্যমে খাল দখলদারদের শাস্তি দেওয়া হোক।’

খাল দখলকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খুনের শাস্তি যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। তাহলে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিয়ে খেলা করলো, মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলো…। মানুষ মরে গেছে বেঁচে যায়! আর আমরা যারা বেঁচে আছি, তারা প্রতিদিন মরছি। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য, দখলকারীদের শাস্তি দিতে হবে। তাদের অর্থেই এই খাল পুনঃরুদ্ধার করতে হবে।’

‘জলাবদ্ধতার ফলে যে জলে আমরা ভাসছি সেটা আমাদের চর্ম রোগের সৃষ্টি করছে। আমাদের জীবন জীবিকা ব্যাহত করছে। আমাদের দায়িত্ব কর্তব্যের জায়গায় ব্যাহত করছে। আমাদের কর্মমুখর জীবনকে স্থবির করে দিচ্ছে।’

‘শহরে নাগরিক সুবিধা নিয়ে মানুষের বসবাস করার কথা। এজন্য গ্রাম ছেড়ে মানুষ শহরে আসতো। কিন্তু এখন মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার পথ খুঁজছে। গ্রামে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবে এমন আশায়।’ -বলেন রেহানা বেগম রানু।

স্মৃতি হাতড়ে রানু বলেন, ‘সবচেয়ে নান্দনিক আবাসিক এলাকা আগ্রাবাদ সিডিএ; আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের অনেক আত্মীয় এখানে বেড়াতে আসতেন। নান্দনিক পরিবেশ, নির্মল হাওয়া, মনোরম পরিবেশ ছিল তখন। সেই দৃষ্টিনন্দন অবস্থা এখন আর নেই।’

আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের তিনবারের নির্বাচিত এই জনপ্রতিধি বলেন, ‘পুরো উত্তর আগ্রাবাদ, দক্ষিণ আগ্রাবাদ এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি, জলাবদ্ধতার কাছে জিম্মি। আমি একটি জরিপে দেখেছিলাম, ৩৮ লক্ষ মানুষ পানিতে বন্দি। এই সংখ্যাটা আরও বেশি হতে পারে। কেন এই সংকট? খাল দখল হয়ে যাওয়ার কারণে। দক্ষিণ আগ্রাবাদে মহেশখাল ছিল, কিন্তু এখন এই খালের কোন অস্তিত্ব আছে?’

‘যে প্রজেক্টটা নেয়া হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে, সেই টাকাটা যাতে হরিলুট না হয়। আমরা দেখছি, খাল উদ্ধারের এত বড় আয়োজনে মাটি কী পরিমাণ খনন হবে? কী পরিমাণ অধিগ্রহণ হবে? এসব আছে। কিন্তু যে খাল দখল হয়ে গেছে, সেটি উদ্ধার হবে কিনা সেটা কিন্তু উল্লেখ নেই।’ বলেন রেহানা বেগম রানু।

তিনি বলেন, ‘এই খাল কারা দখল করেছে? একজন বক্তা বললেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। এটা ঠিক নয়। আমার এখানে এই সমস্যা মানুষ সৃষ্ট। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাল দখলের কোনো সম্পর্ক নেই। এই খাল কি আজ থেকে পাঁচ বছর আগে দখল হয়েছিল? এই জলাবদ্ধতা ২০ থেকে ২৫ বছর আগে থেকে।’

‘দিনের পর দিন মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আমরা যারা জনপ্রতিনিধি আছি, ছিলাম তারা এই দায় এড়াতে পারি না। যারা মেয়র হয়েছেন, সংসদে গিয়েছেন তারাও এই দায় এড়াতে পারেন না। কোন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এই দায় এড়াতে পারবেন না।’

রেহানা বেগম রানুর আশা, ‘বর্তমান সরকার অবকাঠামো উন্নয়ন করেছে সারাদেশে। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে যে বাজেট দেওয়া হয়েছে সেটা যাতে হরলিুট না হয় সবাই ঐকবদ্ধভাবে কাজ করবে, সমন্বিত বৈঠক হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে যেন স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা থাকে। কোন দুর্নীতির ছোঁয়া যেন না থাকে।’

‘৩৬ টা খাল আছে। একটা খাল এক সময় ৮০ ফুট প্রস্থ থাকলে, সেটা এখন ৪০ ফুট হবে কেন? যে খালের প্রস্থ ৬০ ফুট ছিল, সেটা এখন ৩০ ফুট বা ২৫ ফুট কেন? কারা করলো এই দখল? যারা দখল করেছে, তাদের একটা তালিকা করা উচিত। সে যে দলের, যে মতের হোক না কেন। তারা কী সরকারের চেয়ে ক্ষমতাধর? তারা কী রাষ্ট্রযন্ত্রের চেয়ে ক্ষমতাশালী?’ -প্রশ্ন রাখেন রেহানা বেগম রানু।

ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী রানু বলেন, ‘বর্তমানে উপযুক্ত সরকার দেশে রয়েছে। এই সরকার স্বাধীনতার একমাত্র স্বপক্ষের শক্তি। আওয়ামী লীগ সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবন-মান উন্নয়ন করেছে। আমি দেখেছি, কৃষককে সারের জন্য গুলিতে নিহত হতে হয়েছে। আর এখন কৃষকের পেছনে সার দৌড়ছে। এই ব্যানারের একজন রাজনৈতিক কর্মী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কর্মী।’

‘আমি মনে করি, এই সরকারই পারবে চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতে। চট্টগ্রামের উন্নয়ন জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। সেই ছোঁয়া আমরা যে একেবারে পাইনি তা নয়, অনেক বরাদ্দ এসেছে। আমরা এখন তাকিয়ে আছি কতদিনের মধ্যে জলাবদ্ধতা মুক্ত চট্টগ্রাম নগর হবে।’

মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলনের সভাপতি স্বরূপ হাসান শাহীনের সঞ্চালনায় এতে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মজহারুল হক শাহ প্রমুখ আলোচনা করেন।