আবদুল আলী : শুক্রবার। ছুটির দিন। বইমেলায় উপচে পড়া ভিড়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী পাঠক মেলায় ভিড় জমিয়েছেন। পাঠক-লেখক-দর্শনার্থীদের পদাচারণায় মুখরিত চট্টগ্রাম নগরের সিআরবির শিরীষতলা। তাঁরা কিনেছেন বইও। স্টলে স্টলে ঘুরে নিজেদের পছন্দের বই খুঁজে নিচ্ছেন পাঠক। অভিভাবকরাও শিশুসন্তানদের নিয়ে বই বাছাইয়ে ব্যস্ত, নিচ্ছেন সন্তানের পছন্দের বই।
মেলায় গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি, গোয়েন্দা কাহিনী, রহস্যোপন্যাস, ধর্মীয় বই, রূপকথার গল্প, ভূতের গল্প, কমিক্স কী নেই নতুন-পুরাতন বইয়ের সমারোহ। তবে এত সব বইয়ের মধ্যে বরাবরের মতোই বইপ্রেমীদের আকর্ষণ করেছে উপন্যাস ও গল্পের বইগুলো।
শুক্রবার দেখা গেছে, উপন্যাস, গল্প ও শিশু-কিশোরদের বই বিক্রি হচ্ছে বেশি। মেলার একাধিক প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী ও পাঠকদের সঙ্গে কথা বলেও এমন তথ্য জানা গেছে। প্রকাশকরা বলছেন, সব ধরনের বইয়ের চাহিদা কম-বেশি আছে, তবে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে গল্প-উপন্যাস ও শিশু-কিশোরদের বই।
ঝিলমিল প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মাকসুদা বলেন, ‘আমার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে থাকা বইগুলো মূলত শিশুদের নিয়ে। ছুটির দিন, একুশে ফেব্রুয়ারি, পহেলা ফাল্গুনের দিন ভালো বিক্রি হয়েছে। এমনিতে অন্যন্য দিনগুলোতে পাঠক সমাগম কম থাকে, বিক্রিও কম।’
কালধারা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী ফারজানা বলেন, ‘শিশুদের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে উপন্যাসের চাহিদাও রয়েছে।’
‘এই কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি— তরুণরা বই কিনছেন কম। অভিভাবকদের প্রায়ই দেখা যায়, শিশুদের বই খুঁজছেন বেশি।’ যোগ করেন তিনি।
মেলায় সাহিত্য বিচিত্রার এক বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘আমাদের স্টলে শিশু-কিশোরসহ সবার জন্যই বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে। এর মধ্যে শিশুদের বই বিক্রি হচ্ছে বেশি।’
নন্দন বই ঘরের বিক্রয়কর্মীরাও একই কথা জানান। তবে এই প্রকাশনীর ‘বাল্য শিক্ষা’ বইটি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে এবং অনূদিত বইয়ের বিক্রি ভালো বলে জানান তারা।
খড়িমাটির প্রকাশক কবি মনিরুল মনির বলেন, ‘অন্যান্য দিনের চেয়ে ছুটির দিনে বিক্রি হয় ভালো। তবে বেশি বিক্রি হচ্ছে উপন্যাস, তাও এবার প্রকাশিত নতুন উপন্যাসগুলো।’ একই তথ্য জানালেন বাতিঘর ও সালফি পাবলিকেশনের বিক্রয়কর্মীরা।
সাহিত্য বিচিত্রা স্টলে শিশুসন্তানকে নিয়ে বই দেখছিলেন উর্মি আক্তার। তিনি বলেন, ‘ছেলের জন্য কয়েকটি গল্প ও ছড়ার বই নিয়েছি। শিশুদের বই দেখে-শুনে নিতে হয়, তাই একটু সময় লাগে বাছাইয়ে। আমার জন্য একটি উপন্যাস নিয়েছি বাতিঘর থেকে।’
বাতিঘর স্টলের সামনে প্রচুর ভিড়। এসময় তানিয়া নামে এক তরুণীর সাথে কথা হয় বই নিয়ে। ওই তরুণী বলেন, ‘মেলায় আজ (শুক্রবার) প্রথম আসছি। তবে আজ কয়েকটি বই কিনবো— উপন্যাস কিংবা গল্পের বই। তবে এতো ভিড়- বই দেখা ও বাছাই করতে কষ্ট হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারুফ জানান, এক সময় গল্পের বইয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল, উপন্যাস তেমন পড়া হতো না। তবে এখন উপন্যাস পড়া হয় বেশি। প্রতি বছর বইমেলা থেকে কিছু উপন্যাসের বই কিনে নিই। উপন্যাসের পাশাপাশি ইতিহাস ঐতিহ্য নির্ভর বই ও অনূদিত বই পড়তে বেশি ভালো লাগে। এবছরও ভালো উপন্যাস খুঁজছি কয়েকটি।