জিন্নাত আয়ুব : বঙ্গবন্ধু টানেলের কারণে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্রসৈকত পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে; এই সুযোগে পারকি সৈকতে বেড়েছে পর্যটক হয়রানি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে পারকি সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা টানেল হয়ে সমুদ্রসৈকতে আসছেন। সৈকতজুড়ে স্থানীয় পর্যটকের চেয়ে দূরদূরান্তের পর্যটক ছিল বেশি।
পারকি সৈকতের প্রবেশমুখে দেখা যায়, হেলাল নামে এক ব্যক্তি লাঠি হাতে নিয়ে একটি বাসের সামনে পর্যটকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে যাচ্ছেন। বাকবিতণ্ডার কারণ জানতে চাইলে হেলাল একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘বাসটি রাস্তা থেকে ভেতরে নেওয়া যাবে না। রাস্তার পাশে পার্কিং করতে হবে বলেছি। কিন্তু তারা মানছে না।’
এসময় ইব্রাহীম হোসাইন নামে এক পর্যটক বলে উঠেন, ‘আমি নির্দিষ্ট পার্কিংয়ে গিয়ে দেখেছি বাস রাখার জায়গা আছে। পার্কিং করার জন্য আমরা ২০০ টাকা দিয়ে রশিদও নিয়েছি। কিন্তু ওই ব্যক্তি (হেলাল) বাসটি ভেতরে ঢুকতে দেবেন না বলছেন, তাকে নাকি আরও ১০০ টাকা দিতে হবে। তিনি (হেলাল) বলছেন রাস্তার পাশও তাদের নিয়ন্ত্রণে, রশিদ নিয়েছি সমস্যা নাই, রাস্তার পাশেই পার্কিং করতে। এই নিয়ে তিনি ঝগড়া শুরু করে দিয়েছেন।’
সীতাকুণ্ডের কুমিরা থেকে আসা বাসচালক রফিক মিয়াজী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘টানেল হওয়ার পর থেকে আনোয়ারা উপজেলা দিনে দিনে উন্নত হচ্ছে। তবে পারকি সমুদ্র সৈকত এখনও পর্যটকবান্ধব হয়ে উঠেনি। আমি টানেল হওয়ার পর থেকে কয়েকটা ভাড়া নিয়ে এসেছি। এখানে এসে পর্যটকরা হয়রানি হচ্ছেন বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পারকি সৈকত খুবই বিশৃঙ্খল ও ঝামেলাপূর্ণ একটি এলাকা। পার্কিং করা থেকে শুরু করে সৈকতে স্থানীয় বিভিন্ন পণ্য বিক্রেতারা পর্যটকদের নানাভাবে হয়রানি করে যাচ্ছেন।’
ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষা সফরে পারকি সৈকতে আসা শিক্ষক আজিজুল হক একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘টানেল দেখে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পারকিতে এসেছি প্রথম। নিরাপত্তার কোনো বালাই নেই এই এলাকায়। একটা পুলিশও দেখি নাই, নিরাপত্তা কারা দেবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘গাড়িটা পার্কিং করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি মাঠে বসবো সেই সুযোগও নেই। মাঠে পার্কিং করে বসার সুযোগ নিতে চাইলে পার্কিং খরচ দিয়েও ফের দিতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। না হয় পার্কিং খরচ দিয়েও গাড়ি রাস্তার পাশে পার্কিং করতে হচ্ছে। এক কথায় বিশৃঙ্খলায় ভরপুর এই সৈকত। প্রশাসন বিষয়টি মাথায় না নিলে যারা একবার আসবে এই সৈকতে তারা দ্বিতীয়বার আর আসবেন না।’
পারকি সৈকতে পার্কিং খরচ নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় ইউপি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম; পর্যটকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘পার্কিংয়ের জন্য তোলা টাকাগুলো দিয়ে আমাদের খরচ ম্যানেজ করি। বাকি টাকা উপজেলায় (ইউএনও অফিস) জমা দিয়ে দিই।’
রশিদের বাইরে বাড়তি টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলেও উল্লেখ করেন তৌহিদ। সড়কের ওপর ‘পার্কিং বাণিজ্যের’ অভিযোগ এড়িয়ে যান তিনি।
পারকি সৈকত এলাকাটি কর্ণফুলী থানার আওতাধীন; পর্যটকদের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কর্ণফুলী থানার ওসি জহির হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘পারকি সৈকতে আমাদের একটি টিম সবসময় টহলে থাকে। পর্যটকদের অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।’
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশতিয়াক ইমন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘পারকি সৈকতে পার্কিং নিয়ে বিশৃঙ্খলার বিষয়টি আমরা অবগত আছি। খুব দ্রুত এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’