চট্টগ্রাম : রাঙ্গুনিয়ার একটি মাদ্রাসার চার ছাত্রকে ধর্ষণের দায়ে এক শিক্ষকের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।
রোববার চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক সিনিয়র জেলা জজ জয়নাল আবেদিন এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিত নাছির উদ্দিন (৩৫) কক্সবাজারের চকরিয়া থানার কৈয়ারবিল ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট বেউলায়। তার বাবার নাম নুরুল ইসলাম।
নাছির চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার শান্তিনিকেতন মহত পাড়া এলাকার আহমদিয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসার হোস্টেল সুপার ছিলেন।
ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট জিকো বড়ুয়া বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। রায় ঘোষণার সময় নাছির উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর কড়া নিপাত্তায় তাকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়।
২০২০ সালের ২০ অক্টোবর চার ছাত্রের অভিভাবকের অভিযোগের ভিত্তিতে নাছির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার নথিতে বলা হয়, ১০ বছর বয়সী এক শিশুর বাবার অভিযোগ করেন, ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর তার ছেলে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে বাসায় চলে আসে। পালিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে সে জানায়, শিক্ষক নাছির উদ্দিন তাকেসহ চারজনকে নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে দুই মাস ধরে প্রতি রাতে ধর্ষণ করত।
২০২০ সালের ১২ অক্টোবর রাত ১টার দিকে ওই শিশুকে ঘুম থেকে তুলে নাছির উদ্দিন তার নিজের কক্ষে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। ভয়ে চিৎকার করলে তার মুখও চেপে ধরেন ওই শিক্ষক।
আদালতের দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বিশেষ পিপি জিকো বড়ুয়া বলেন, আদালত বলেছেন, আসামি একজন সিরিয়াল রেপিস্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। ভিকটিমদেরকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাদানের পরিবর্তে আসামি নিজেই ধর্ষণের মত ঘৃণিত ও জঘন্য অপরাধে জড়িয়েছেন। দিনের পর দিন ভিকটিমদেরকে ভয়ভীতির মধ্যে রেখে জোর পূর্বক বলাৎকার করেছেন, যা তার স্বাভাবিক অভ্যাস হিসেবে পরিলক্ষিত হয়েছে।
যা আসামির ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার জবানবন্দি এবং ভিকটিমদের ২২ ধারার জবানবন্দি পর্যালোচনায় সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। এসব বিষয় পর্যালোচনায় আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।
মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার আগে পাঁচ বছর বিদেশে ছিলেন নাছির। তার এসব কাজের কথা জানজানি হলে ২০১৮ সালে সন্তানকে নিয়ে নাছিরের স্ত্রী আলাদা হয়ে যান।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন নাছির। ২০২১ সালের ৪ জুলাই তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি অভিযোগ গঠন করে আদালত তার বিচার শুরুর আদেশ দেয়। মোট ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত রায় দিয়েছেন।