সহিংসতা ছাড়া কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের নবগঠিত কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কোন সহিংসা গোলযোগ ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ। তবে ভোট গ্রহণ শুরুর দু ঘন্টার মাথায় সকাল সাড়ে ১০টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্র দখল ও কারচুপির অভিযোগে ভোট বর্জন করে বিএনপি।

বিএনপির উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম ফোরকান তার শিকলবাহা চৌমুহনিস্থ তার নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা দেন। শান্তিপূর্ণ ভোট চললেও সকাল থেকেই ভোট কেন্দ্রগুলো ছিল ভোটার শূন্য।

বিএনপির বর্জনের ঘোষনার পর বেলা দেড়টার সময় সরকারী দলের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে ইসলামী ফ্রন্টের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মোমবাতি প্রতীকে মাওলানা মুহাম্মদ মুছা ও জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মুন্নি বেগমও ভোট থেকে সরে দাড়ায়। তবে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ফারুক চৌধুরী অভিযোগ বলে বলেছেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোট চললেও পরাজয় নিশ্চিত জেনে বিএনপি ভোট থেকে সরে দাড়িয়েছে। মূলত তারা বর্জন করার জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।

এদিকে নির্বাচন চলাকালিন সময়ে সকাল পৌনে ৯টার সময় শিকলবাহা এজেচৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হলে পুলিশ এসে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণ করে। বেলা ১টায় বড়উঠান দৌলতপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমদ ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বেআইনী ভাবে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার পথে র‌্যাবের কাছে প্রায় এক ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকে।

এছাড়াও ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে বেশিরভাগ কেন্দ্রে পুরো সময় ভোটার উপস্থিতি ছিল কম থাকলেও বিএনপি, ইসলামী ফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের ভোট বর্জনের পর থেকে ভোট কেন্দ্রগুলোতে সরকারী দলের প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে।

বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি এহছান এ খান, উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম ফোরকান, উপজেলা বিএনপর সাধারণ সম্পাদক আলী আব্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম মামুন মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মুহাম্মদ ওসমান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উম্মে মিরজান শামীমাসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে এজেন্টদের প্রবেশে বাধা প্রসঙ্গে বিএনপির প্রার্থী এসএম ফোরকান বলেন, ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৬টি কেন্দ্রে এজেন্টদের প্রবেশ করতে দেয়নি সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। রোববার ভোর থেকে বহিরাগতদের মহড়া এবং ককটেল ফাটিয়ে ভোটারদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হুমকি প্রদান করে বলে অভিযোগ করা হয়। তবে সাংবাদিকরা বিভিন্ন কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদের উপস্থিতি লক্ষনিয় বলে বিএনপির প্রার্থীকে জানালে তিনি বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।

এদিকে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তফশিলের পর থেকে ষড়যন্ত্র করে আসছিল। যার কারনে তারা তেমন প্রচার প্রচারণা চালায়নি এবং ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে যায়নি। কর্ণফুলী উপজেলার প্রথম নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে ভোট বর্জন ছিল তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ। বিএনপি তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে ভোট বর্জন করে। যা তাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে।

নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের ফারুক চৌধুরী নৌকা প্রতীকে, বিএনপির এসএম ফোরকান ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এবং ইসলামিক ফ্রন্টের জাহাঙ্গীর কবির রিজভী চেয়ার প্রতীক নিয়ে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের দিদারুল ইসলাম চৌধুরী নৌকা প্রতীকে, বিএনপির হাজী মুহাম্মদ ওসমান ধানের শীষ প্রতীকে, ইসলামী ফ্রন্টের মওলানা মুছা মোমবাতি প্রতীকে ও ইসলামিক ফ্রন্টের নাসির আহমদ চেয়ার প্রতীকে, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বানাজা বেগম নৌকা প্রতীকে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উম্মে মিরজান শামীমা ধানের শীষ প্রতীকে ও জাতীয় পার্টির মুন্নি বেগম লাঙ্গল প্রতীকে। নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে আওয়ামীলীগের নৌকা ও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪২টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ১ লাখ ৭ হাজার ৭৯৯ জন ভোটার রয়েছে। তার মধ্যে পুরুষ ৫৩ হাজার ৫৯৯, মহিলা ৫৪ হাজার ২০০।

কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী রিটানিং অফিসার সৈয়দ আবু ছাঈদ বলেন, নির্বাচনে কোন কেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোটাররা স্বতস্পূর্ত ভাবে ভোট প্রদান করছে। নির্বাচনের সমন্বয়কারী ও কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবেই কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।