জিন্নাত আয়ুব : একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি রিপোর্টে লেখা হয়েছে, ভ্রূণে কোনও স্পন্দন নেই, তার মৃত্যু হয়েছে। ‘মিসড অ্যাবরশন!’ একই অন্তঃসত্ত্বা নারীকে দেওয়া আরেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্টে লেখা হয়েছে, ভ্রূণ জীবিত। গর্ভে তার স্পন্দন মিলছে। নড়াচড়াও টের পাওয়া যাচ্ছে।
তাহলে কোন রিপোর্টটি সত্যি? ‘মিসড অ্যাবরশন!’ উল্লেখ করা সেই ডাক্তারই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তিনি ভুল করেছেন। ভুল মানুষেরই হয়!
ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়। ভুক্তভোগী নারীর নাম সোনিয়া আকতার। তিনি জানান, গত ২০ ডিসেম্বর আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে সাইনিং ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে নিজের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি রিপোর্ট সংগ্রহ করেন তিনি। এতে লেখা হয়েছে, ভ্রূণে কোনও স্পন্দন নেই, তার মৃত্যু হয়েছে। ‘মিসড অ্যাবরশন!’
সাইনিং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডা. প্রভা মজুমদার তার রিপোর্টের কমেন্টে ‘মিসড অ্যাবরশন’ শব্দ দু’টি লিখে প্রেসক্রিপশনে গর্ভপাত, এন্টিবায়োটিক ও ব্যাথার কয়েকটি ওষুধ লিখে দেন!
তবে সন্দেহ হওয়ায় এই ডাক্তারের পরামর্শ না মেনে পরদিন আনোয়ারার চাতরী চৌমুহনীতে অবস্থিত শেভরণ ডায়াগনস্টিকে আবার আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করান সোনিয়া।
এরপর শেভরণের ডা. ওবায়দুল হকের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি রিপোর্টে লেখা হয়েছে, ভ্রূণ জীবিত। গর্ভে তার স্পন্দন মিলছে। নড়াচড়াও টের পাওয়া যাচ্ছে।
এসময় শেভরণে থাকা গাইনি ডাক্তার খোরশেদ শিরিনকে দেখানো হলে, তিনি বলেন, ‘বাচ্চার পালস আছে, চার সপ্তাহ বেড রেস্টের পর আবার ফলোআপ করাতে।’
ভুক্তভোগী সোনিয়া আকতার বলেন, ‘ডা. প্রভা মজুমদার আমার ও আমার অনাগত সন্তানকে এক প্রকার মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। উনি আমাকে গর্ভপাতের জন্য ওষুধ লিখে দেন এবং বলেন ওষুধ সেবনের পর রক্তপাত বেশি হলে হাসপাতালে ভর্তি হবেন। কিন্তু ডাক্তারের কথায় আমি আর আমার শাশুড়ির সন্দেহ হয়।’
‘যেহেতু আমি শরীরের তেমন কোন সমস্যার টের পাচ্ছিলাম না। তখন আমি শেভরনে ডাক্তার খোরশেদা শিরিনকে একদিন পর দেখাই। তখন তিনি আবার আল্ট্রা করাতে বলেন। আবার আল্ট্রা করিয়ে ডাক্তার খোরশেদা শিরিনকে দেখালে তিনি বলেন সব ঠিক আছে একটু রেস্টে থাকতে।’ বলেন সোনিয়া।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে সাইনিং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে, প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মো. হান্নান বলেন, ‘ডাক্তার প্রভা মজুমদারের সঙ্গে দেখা করা যাবে না, যা বলার আমাকে বলুন।’
পরে অভিযোগের বিষয়টি তুলে ধরা হলে হান্নান বলেন, ‘আমাদের আরেকটি প্রতিষ্ঠান চাতরী চৌমুহনীতে পপুলারে আসুন, ওখানে ডাক্তার কথা বলবেন।’
পরে পপুলারে গেলে হান্নান বলেন, ‘বিষয়টি এখানে শেষ করুন। আমি আপনাদের সম্মানি দিচ্ছি। এখানে দফারফা করুন। নয়তো নিউজ করলে করুন, ডাক্তারের সাথে দেখা করা যাবে না।’
পরে মুঠোফোন নাম্বার সংগ্রহ করে সাইনিং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডা. প্রভা মজুমদারকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরা এই বিষয়টি নিয়ে গতকাল থেকে অনুসন্ধান করছেন বলে শুনেছি। আমি তো ফেরাশতা নই, ডাক্তার, আমার তো ভুল হবে। হয়তো এটা আমার ভুল হয়েছে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে ডা. প্রভা মজুমদার বলেন, ‘মানুষের তো ভুল হয়। এখন আপনি রোগীকে আমার কাছে আবার আসতে বলুন। আমি আবার ভালো করে চেকআপ করে দেব।’
বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. মো. লিয়াকত হোসাইন বলেন, ‘চিকিৎসা কাজে চিকিৎসকের গাফিলতি থাকলে ভুক্তভোগী চাইলে আমাদের কাছে অভিযোগ দিতে পারেন। তখন তদন্ত সাপেক্ষে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।’