একুশে পত্রিকার অনুসন্ধানী সিরিজ প্রতিবেদন পেল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

একুশে প্রতিবেদক : একুশে পত্রিকার একটি সিরিজ প্রতিবেদন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের (জিআইজেএন) ২০২৩ সালে বাংলাদেশের সেরা ৮ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

সেরা প্রতিবেদনের তালিকায় স্থান পাওয়া একুশে পত্রিকার তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু হয় গত ২৩ জুলাই। প্রতিবেদনগুলো তৈরি করেন একুশে পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক শরীফুল রুকন। ওই তিনটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ডাক্তারদের পটাতে চেক বাড়ি গাড়ি সবই’, ‘উপহারের টাকা উসুল রোগীর ‘গলা কেটে’, ‘কমিশন বাণিজ্যে দ্বিগুণ রোগ নির্ণয়ের খরচ’ প্রত্যেক পর্বে মূল সংবাদের সঙ্গে তিন-চারটি করে পার্শ্ব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক সাংবাদিকতার উন্নয়নে কাজ করে থাকে—এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি আন্তর্জাতিক জোট। এই জোটের সদস্যরা অনুসন্ধানী এবং ডেটা সাংবাদিকদের মধ্যে নতুন নতুন তত্ত্ব ও তথ্য পরিবেশন ছাড়াও আয়োজন করেন প্রশিক্ষণের। তাঁরা এমন সব দেশেও কাজ করছেন, যেসব দেশে সরকার দমন-পীড়ন চালায় প্রতিপক্ষ আর গণমাধ্যমের ওপর।

একুশে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে জিআইজেএন লিখেছে, ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানির কাছ থেকে চিকিৎসকদের উপহার নেওয়া ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন গ্রহণ বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ও সুপরিচিত প্রথা। তবে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর চট্টগ্রামভিত্তিক গণমাধ্যম একুশে পত্রিকা বিষয়টি ঘিরে যেভাবে অনুসন্ধান চালিয়েছে তেমনটা ঘটে খুবই কালেভদ্রে। এর অন্যতম কারণ, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ওপর শিল্পটির বড় রকমের প্রভাব। বড় অনেক নিউজ আউটলেটই একই ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর মালিকানাধীন, যাদের আবার ওষুধের ব্যবসা রয়েছে, ফলে ওষুধ শিল্পসম্পর্কিত অনুসন্ধানগুলো প্রায়ই এখানে সেন্সরশিপের মুখে পড়ে।

এ সিরিজ প্রতিবেদনটি কোম্পানিগুলোর পদ্ধতিগত ঘুষ ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় তার উল্লেখযোগ্য প্রভাবের ওপর আলোকপাত করেছে। এটি তুলে ধরেছে, ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রচারের জন্য কীভাবে ডাক্তারদের অর্থ, গাড়ি এবং এমনকি বাড়িসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে থাকে, যা ফার্মাসিউটিক্যালস মার্কেটিং অনুশীলনের নীতি বহির্ভূত এবং শেষ পর্যন্ত রোগীদের ওপর ওষুধের বাড়তি খরচ চাপিয়ে দেয়।

সিরিজের আরেকটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়, নির্ধারিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগীদের বিভিন্ন টেস্ট করার প্রেসক্রিপশন প্রদানের বিপরীতে চিকিৎসকেরা যথেষ্ট পরিমাণ কমিশন নেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, কমিশনের প্রাপ্তির এ হারকে প্রায়ই অকপটে “রেফারেল ফি” নাম দেওয়া হয়। পরীক্ষার ধরন আর খ্যাতির ওপর নির্ভর করে চিকিৎসকেরা ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন পেয়ে থাকেন, যা শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা খরচ বাড়িয়ে দেয়। মাসব্যাপী অনুসন্ধান চালিয়ে চিকিৎসকদের জন্য তৈরি করা ৬৫টি ব্যাংক চেকের অনুলিপি, কয়েক ডজন প্রেসক্রিপশন এবং ওষুধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে থেকে হুইসেলব্লোয়ারদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করাসহ বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করেন এই প্রতিবেদক। অনুসন্ধানটি জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশেও প্রকাশিত হয়।

জিআইজেএনের শীর্ষ তালিকায় আসা অন্য প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে আছে– বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ভুয়া বিশেষজ্ঞদের লেখা মিথ্যা তথ্যের ছড়াছড়ি নিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির ‘ফেক এক্সপার্ট পুশ পলিটিক্যাল ডিজইনফরমেশন ইন লিড আপ টু বাংলাদেশ ইলেকশন’, ১৮ বছরের কম বয়সিদের অপরাধী হিসেবে কারাভোগ নিয়ে চট্টগ্রামভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিভয়েস টোয়েন্টিফোর ডটকমের ‘কার দোষে ওরা বড় অপরাধী’, নারীদের ফাঁদে ফেলে যৌনতা ও সংবেদনশীল ভিডিও ধারণ করে তা মাইক্রোব্লগিং সাইট টেলিগ্রামে শেয়ার করে জিম্মি করা নিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ‘সাবেক প্রেমিকাকে ধর্ষণের পর একাধিক ভিডিও ছাড়েন পমপম গ্রুপে’, জার্মানিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ডয়চে ভেলে’-এর একটি প্রতিবেদন, বাংলাদেশি এক রাজনীতিবিদের নিউইয়র্কে বাড়ি-গাড়ি ও সম্পদের হিসাব নিয়ে ওসিসিআরপির (অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট) করা একটি প্রতিবেদন এবং ‘ওয়াটার লর্ডস এক্সপোর্ট ড্রয়াউট-স্ট্রিকেন ফার্মার্স ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে বাংলাদেশের খরাপ্রবণ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে সেচ সংকট নিয়ে লন্ডনভিত্তিক নিউজ আউটলেট দ্য থার্ড পোলের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।

২০ ডিসেম্বর জিআইজেএন সেরা প্রতিবেদনের এই তালিকা প্রকাশ করে।