চট্টগ্রাম: কখনো গ্রেফতার হয়েছেন পিস্তল নিয়ে। কখনো গ্রেফতার হন ইয়াবা হাতে। কয়েকবার বাসিন্দা হয়েছেন কারাগারেরও। এরপরও নিজেকে নেন নি শুধরে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন অসংখ্য মানুষকে। তালিকাভুক্ত এই শীর্ষ সন্ত্রাসী হলেন ইসমাইল হোসেন ওরফে টেম্পু।
টেম্পু বাহিনীর প্রধান ইসমাইল হোসেন ওরফে টেম্পুকে এবার এলজি ও কার্তুজসহ গ্রেফতার করেছে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ; এতে স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন বন্দরনগরের বাসিন্দারা।
ইসমাইল হোসেন ওরফে টেম্পুর বাবা ছিলেন টেম্পু চালক। বাবার সাথে টেম্পুতে কাজ করায় তার নাম হয়ে যায় টেম্পু। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় সক্রিয় টেম্পু বাহিনীর দল নেতা ছিলেন ইসমাইল হোসেন ওরফে টেম্পু। নগরের বড় একটি অংশে রীতিমত ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে আসছিলেন বহু মামলার এই ফেরারি আসামি। ওই এলাকায় কেউ বাড়ি করতে গেলে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করত। টাকার না পেলে চালাতো গুলি।
টেম্পুর চার ভাইয়ের সবাই ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত। বড় দুই ভাই খোকন ও ইদ্রিস কারাগারে আছেন। ছোট ভাই সোহাগও বর্তমানে পলাতক।
পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়ালীউদ্দিন আকবর বলেন, ‘ইসমাইল হোসেন টেম্পুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অন্তত ৩০টি মামলা রয়েছে। হত্যা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস সৃষ্টির ঘটনায় এসব মামলা হয়। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেও একাধিক মামলা আছে।’
এদিকে ২০১৪ সালের ৪ নভেম্বর চান্দগাঁওয়ের শমশের পাড়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের পর বিদেশী পিস্তলসহ গ্রেফতার হয় ইসমাইল হোসেন ওরফে টেম্পু। ২২টি মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর বেশকিছু দিন পর জামিনে মুক্তি পান ভয়ংকর এই সন্ত্রাসী। ফের জড়িয়ে পড়েন অপরাধ চক্রে। তার অপকর্মের ফিরিস্তি একের পর এক আসতে থাকে পুলিশের কাছে।
গত বছর ২০ মে বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন সাংবাদিকের পাহাড় থেকে টেম্পুকে দুই সহযোগিসহ গ্রেফতার করে পুলিশ; সেসময় তার কাছ থেকে ২০০টি ইয়াবা পাওয়ার কথা জানান বায়েজিদ বোস্তামী থানার তৎকালীন ওসি মোহাম্মদ মহসীন। চলতি বছরের শুরুতে জামিনে মুক্ত হয়ে পুরনো পথে পা বাড়ান টেম্পু।
সর্বশেষ শনিবার রাত ৮টার দিকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে টেম্পুকে পাঁচ সহযোগিসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে দুইটি এলজি ও চার রাউন্ড কার্তুজ ও ছয়টি ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে। হিলভিউ আবাসিক এলাকার বি-ব্লকের ৫ নাম্বার সড়কে এই অভিযান চালায় পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।
গ্রেফতার হওয়া টেম্পুর সহযোগিরা হলেন- জাহেদ হোসেন মুন্না, মো. সোহেল, রবিউল প্রকাশ মানিক, ইলিয়াছ কাঞ্চন ও মো. তৌহিদ।
পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়ালীউদ্দিন আকবর বলেন, ‘গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে গিয়েছিল আমাদের থানা পুলিশের একটি দল। এসময় হাতেনাতে টেম্পুসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। টেম্পুর অনুগত অপরাধীরা বেশ ভয়ঙ্কর।’
‘টেম্পুর কোমরে লুঙ্গির সাথে গোঁজা অবস্থায় একটি এলজি ও দুই রাউন্ড কার্তুজ পাওয়া যায়। এছাড়া মুন্নার কাছ থেকে একটি এলজি ও দুই রাউন্ড করে কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। সোহেল, মানিক ও ইলিয়াছে কাছ থেকে পাওয়া যায় ধারালো অস্ত্র।’
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুইটি মামলা হয়েছে বলে জানান পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়ালীউদ্দিন আকবর।