রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় দুই শিক্ষক পরিবারের মধ্যে একে আপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই দুই পরিবারই চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার হোছনাবাদ ইউনিয়নের খিল মোগল গ্রামের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
তাদের দ্বন্দ্বের মূল কারণ দুই বাড়ির মধ্যবর্তী একটি সীমানা নিয়ে। এক পক্ষের দাবি, তার পূর্ব পুরুষের কেনা জায়গার কিছু অংশ প্রতিপক্ষ দখল করার চেষ্টা করছে এবং ময়লা, আবর্জনা ফেলে তাদের চলাচলে বাধাগ্রস্ত করছে এবং তাদের ময়লা, আবর্জনা নিক্ষেপের কারণে বাড়ি-ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। জায়গাটি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও প্রতিপক্ষ তাদের উপর এমন অন্যায় করে চলেছে।
অন্যদিকে অপর পক্ষের অভিযোগ, প্রথম পক্ষের পূর্ব পুরুষেরা যতটুকু জায়গা কিনেছে তার চেয়ে বেশি জায়গা দখল করেছে তারা। এবং মামলা দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে প্রথম পক্ষ। এবং ময়লা আবর্জনা নিজেরাই ফেলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ দিচ্ছে।
এ বিষয়ে একই এলাকার বাসিন্দা এবং রাজাভূবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্বপন কান্তি নাথ অভিযোগ করে একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমার স্ত্রীও খিলমোগল ঈশান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। আমার পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী স্বপন সাহার স্ত্রী উৎপলা সাহা এবং তার ছেলে রকি সাহা স্থানীয় কতিপয় খারাপ প্রকৃতির আসাধু নেতাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্ররোচনায় সময়ে-অসময়ে আমাকে এবং পরিবারের সদস্যদেরকে গালিগালাজ এবং আপত্তিকর মন্তব্য করে। তাছাড়া ঘরের দেয়াল, জানালা-দরজায় এবং ঘরের আশেপাশে ময়লা আর্বজনা ছুঁড়ে মারে। বিশেষ করে রান্না ঘরের উচ্ছিষ্ট দ্রব্য এবং প্রস্রাব। আমার ঘরের আশেপাশে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকা স্বত্বেও আমরা দরজা-জানালা খুলতে পারি না। চাকুরীর সুবাদে আমার অন্যান্য ভাইরা পরিবারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা বাস করে বিধায়, এই সুযোগে আমাকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করে সামনের বড় পুকুর এবং বসতভিটার কিছু অংশ কিনে নেওয়ার পাঁয়তারা করে আসছে। এবং মাঝে মাঝে উক্ত স্থানীয় নেতারা আমাদেরকে দেশত্যাগ করার হুমকি প্রদান করে। এই ব্যাপারে আমি স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের অবহিত করি এবং বেশ কয়েকবার স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করি। ঐ সমস্ত ব্যক্তিগণ অসাধু প্রকৃতির লোক হওয়াতে চেয়ারম্যান কোনরকম ব্যবস্থা নিতে অনিহা প্রকাশ করে। তাছাড়া ২নং হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব যীশু চৌধুরীও উল্লেখিত বিষয়ে বিশেষ ভাবে অবগত আছেন। সবশেষে আমি নিরুপায় হয়ে এ বিষয়ে বুধবার (৬ ডিসেম্বর) ইউএনও মহোদয়ের কাছেও অভিযোগ করি। আমি এসব হয়রানি থেকে নিস্তার চাই।
এ বিষয়ে রকি সাহা অভিযোগ করে একুশে পত্রিকাকে বলেন, তিনি খিলমোগল ঈশান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন এবং তার মা উৎপলা সাহাও রাজাভূবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। তার এবং তার মায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষক স্বপন কান্তি নাথের দেয়া সম্পূর্ণ অভিযোগ মিথ্যে ও বানোয়াট। সে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মামলা, মোকদ্দমা দিয়ে হেনস্তা করে আসছে। তার জায়গা তার বাড়ির সীমানা পর্যন্ত কিন্তু তিনি আমাদের জায়গার কিছু অংশও তার দাবি করছে। এ বিষয় নিয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে দেওয়ানি মামলাসহ বিভিন্ন মামলা দিয়ে আমাদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করে আসছে। সে একজন মামলাবাজ ব্যক্তি তার বিষয়ে এলাকার অনেকেই জানে। তিনি প্রশাসনের অনেক জায়গায় আমার বিরুদ্ধে ২০১১ সাল থেকেই অভিযোগ দিয়ে আসছে। আর তিনি যে বলছেন আমরা তার বাড়িতে ময়লা আবর্জনা ফেলি সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি নিজেই এসব ময়লা আবর্জনা ফেলে আমাদের বিচারের সম্মুখীন করতে চাচ্ছে। শুনেছি গতকালও তিনি ইউএনও মহোদয়ের কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি শিক্ষক স্বপন কান্তি নাথের মামলা, মোকদ্দমা ও মিথ্যে অভিযোগের নিস্তার চাই। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি বিভিন্ন কৌশলে আমাদের হেনস্তা ও হয়রানি করে আসছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান হাজী দানু মিয়া একুশে পত্রিকাকে বলেন, দীর্ঘদিন চলমান এ বিরোধ। আমি একবার সরেজমিনে গিয়ে সমাধান দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। বিরোধের প্রধান কারণ হচ্ছে শিক্ষক স্বপন নাথের পরিবারটি সেখানে জায়গা কিনে বসবাস করছে অন্যদিকে পাড়াটা হলো সাহা পাড়া। আর এই নাথ এবং সাহা নিয়েই মূল বিরোধ। সাহা পাড়ায় এই নাথকে গ্রহণ করতে এখনো কষ্ট হচ্ছে তাদের।
এদিকে স্বপন কান্তি নাথের লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী একুশে পত্রিকাকে বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ এসেছে কিনা এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তবে এরকম অভিযোগ এলে সাধারণত আমি দুইটি কাজ করি। তা হলো যদি ব্যক্তিগত ইস্যু থাকে ইউনিয়ন পরিষদকে দিয়ে দিই, যাতে ইউনিয়ন পরিষদ শালিসি গ্রাম আদালতের মাধ্যমে এটির সমাধান দেয়, আর আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সমস্যা থাকলে সেটা ওসি সাহেবের কাছে রেফার করি।