কিউইদের বোলিং তোপে ১৭২ রানে থামল বাংলাদেশের ইনিংস


খেলাধুলা ডেস্ক : সিলেট টেস্টের বিপরীত চিত্র দেখা গেলো ঢাকা টেস্টে। সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসে যেখানে বাংলাদেশ ৩১০ রান তোলে, সেখানে ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৭২ রানেই অলআউট হয়েছে টাইগাররা। সিলেট টেস্টে যেখানে টাইগাররা নিজেদের স্পিন ঘূর্ণিতে কাবু করেছে কিউইদের সেখানে দ্বিতীয় টেস্টে নিজেরাই কিউইদের স্পিন বিষে নীল হয়েছে শান্ত-মুমিনুলরা।

কিউইদের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৪৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় দাঁড়ায় বাংলাদেশ। মুশফিক-শাহাদাত দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। কিউইদের বিপক্ষে আজ প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ‘অবস্ট্র্যাক্ট দ্য ফিল্ড’ আউট হন মুশফিক। এরপর আর বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তিন কিউই স্পিনার এজাজ প্যাটেল, মিচেল স্যান্টনার ও গ্লেন ফিলিপস ধসিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ। এর তিন স্পিনার তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশর ৮ উইকেট। শেষ পর্যন্ত ৬৬ ওভার ২ বলে সব উইকেট হারিয়ে ১৭২ রান তোলে বাংলাদেশ।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে টস জিতে আজ প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে সকাল থেকেই ঢাকার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। স্বাভাবিক আলোতে খেলা প্রায় অসম্ভব। যে কারণে দিনের শুরু থেকেই ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে ব্যাট করে বাংলাদেশ দল।

শুরু থেকেই দেখেশুনে খেলতে থাকেন দুই টাইগার ওপেনার মাহমুদুল হাসান ও জাকির হাসান। ১০ ওভারে নেন ২৫ রান। তবে এরপরেই ঘটে ছন্দপতন।

পরপর দুই ওভারে ফিরে যান এই দুই ওপেনার। দলীয় ২৯ রানে স্যান্টনারের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান জাকির হাসান। আউট হওয়ার আগে করেন ২৪ বলে ৮ রান।

জাকিরের পথ ধরে পরের ওভারে সাজঘরে ফিরে জান মাহমুদুল হাসান জয়ও। ৪০ বলে ১৪ রান করে এজাজ প্যাটের বলে শর্ট লেগে ল্যাথামের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। তার বিদায়ে ২৯ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

২৯ রানে ২ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক। এই জুটি দলের বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। তবে তারাও ব্যর্থ হন।

দলীয় ৪১ রানে এজাজ প্যাটেলের বলে টম ব্লান্ডেলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান মুমিনুল হক। তার বিদায়ে ৪১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।

দলের বিপর্যয় আরও বাড়িয়ে সাজঘরে ফিরে যান নাজমুল হোসেন শান্তও। মিচেল স্যান্টনারের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি। তার বিদায়ে ৪৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।

এরপরেই দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন মুশফিকুর রহিম ও শাহাদাত হোসেন। এই জুটির ৩৩ রানে ভর করে ৪ উইকেটে ৮০ রান তুলে প্রথম সেশন তুলে লাঞ্চ বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

তবে লাঞ্চ বিরতি থেকে ফিরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ‘অবস্ট্র্যাক্ট দ্য ফিল্ড’ আউট হন মুশফিক। খেলার ৪০.৪ ওভারে কাইল জেমিসনের বল সলিড ডিফেন্স করেছিলেন মুশফিক। এরপর অহেতুক বলটি ডান হাত দিয়ে ধরে ফেলেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা এতে ‘অবস্ট্র্যাক্ট দ্য ফিল্ড’ আউটের আবেদন করেন। তৃতীয় আম্পায়ার ভিডিও রিপ্লে দেখে মুশফিককে আউট ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন আউট হলেন মুশফিক। সবমিলিয়ে অবশ্য তার আগে এমন বিচিত্র আউট হয়েছিলেন আরও অনেকেই।

মুশফিকের পর ফিরে যান শাহাদাত হোসেনও। গ্লেন ফিলিপসের বলে টম ব্লান্ডেলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে। আউট হওয়ার আগে করেন ১০২ বলে ৩১ রান।

শাহাদাতের পরে ক্রিজে বেশি সময় থাকতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান ও মেহেদেী হাসান সোহান। ১৬ বলে ৭ রান করা সোহান গ্লেন ফিলিপসের বলে মিড অনে মিচেল স্যান্টনারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে পথ ধরেন সাজঘরের।

সোহানের পর মিরাজও ফিরে যান সাজঘরে। ৪২ বলে ২০ করে স্লিপে মিচেল স্যান্টনারের বলে স্লিপে ড্যারিল মিচেলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। তার বিদায়ে ১৪৫ রানে ৮ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১৪৫ রানে ৮ উইকেট হারানো বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ১৪৯ রান করে চা পানের বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

চা পানের বিরতি থেকে ফিরেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তাইজুল ইসলাম। ১৩ বলে ৬রান করে গ্লেন ফিলিপসের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান তিনি।

এরপর দশম উইকেটে নাঈম হাসান ও শরিফুল ইসলাম ১৮ রানের জুটি গড়েন। তাদের ১৮ রানে ভর করে ৬৬ ওভার ২ বলে সব উইকেট হারিয়ে ১৭২ রান তোলে বাংলাদেশ।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে এজাজ প্যাটেল ২ টি, মিচেল স্যান্টনার তিনটি, গ্লেন ফিলিপস ৩ টি ও টিম সাউদি একটি উইকেট নেন।