আসামি জমিয়ে ৪-৫ দিন পর আদালতে পাঠান বাঁশখালীর ওসি!

শরীফুল রুকন : কয়েকদিন যাবত গ্রেফতার করা আসামিদের থানা হাজতে আটকে রেখে একসঙ্গে আদালতে প্রেরণ করে আসছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার ওসি আলমগীর হোসেন; অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওসির বক্তব্য, আদালতে নয়, আসামি জমিয়ে কারাগারে পাঠান তিনি।

গত ৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টায় বাঁশখালীর ছাপাছরি উত্তরপাড়া থেকে গ্রেফতার হন মৃত আলী হোসেনের ছেলে মো. ইউনুছ (৩৬)। গত ১২ জুলাই স্ত্রীর দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করে বাঁশখালী থানার পুলিশ। মামলা নাম্বার ৬২৩/২০১৭।

ইউনুছের ভাই আবদুর রহমান অভিযোগ করেছেন, ৯ সেপ্টেম্বর নিজের বাড়ি থেকে গ্রেফতারের পর বুধবার পর্যন্ত তার ভাই ইউনুছকে আদালতে হাজির করেনি পুলিশ। আদালতে না আনার ফলে ভাইয়ের জামিন চাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও জানান আবদুর রহমান।

এ বিষয়ে বাঁশখালী থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘৯ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হলে পরদিনই তার গ্রেফতারের তথ্য আদালতে পাঠানোর কথা। পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেফতারের পর থানা হাজতে থাকে। কারণ বাঁশখালীর আদালতে হাজতখানা নেই। তাই কয়েকদিন পরপর একসঙ্গে বেশি আসামি জড়ো করে থানা থেকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।’

থানায় গিয়ে এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে ইউনুছের স্বজনদের প্রতি পরামর্শও দেন ওসি আলমগীর।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি রতন কুমার রায় বলেন, ‘আসামিকে গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে। কেউ উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা না মানলে বেআইনি কাজ করছেন। পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সে এই বিষয়টি আমি তুলে ধরবো।’

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘বাঁশখালীতে আমি দেখেছি সেখানকার বিচারিক আদালতে আসামি রাখার জায়গা নেই। সেই কারণে আসামি গ্রেফতারের তথ্য আদালতকে জানায় পুলিশ। এরপর আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলে কয়েকদিন পরপর বেশকিছু আসামি একত্র করে কারাগারে পাঠায় বাঁশখালী থানার পুলিশ। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম কারাগারে আনার আগে বাঁশখালী থানার হাজতকেই কারাগার বলে ধরা হয়।’

তিনি বলেন, ‘এখন ইউনুছের ক্ষেত্রে কী হয়েছে সেটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। হয়তো বাঁশখালীর বিচারিক আদালতে তাকে গ্রেফতারের তথ্য উপস্থাপনের পর আদালত কারাগারে পাঠাতে বলেছে। হয়তো এখন চট্টগ্রাম কারাগারে যাওয়ার অপেক্ষায় সে আছে।’

এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত খোঁজ নিতে পরামর্শ দেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রেজাউল মাসুদ।

এদিকে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল- ১ এর জারি করা পরোয়ানামূলে ইউনুছকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধরা হয়েছে উক্ত ট্রাইব্যুনালের বিচারিক এলাকার মধ্য থেকে। এ প্রেক্ষিতে আইন অনুযায়ী তাকে চট্টগ্রাম আদালতের সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে হবে। বাঁশখালীর বিচারিক আদালতে হাজির করার সুযোগ নেই।’

‘গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির না করে আইন ভেঙেছে পুলিশ।’ যোগ করেন আইনজীবি মো. জসিম উদ্দিন।