মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, বাঁশখালী : নদী-সাগরে নেমে জীবনে কখনো মাছ শিকার করেননি। কিন্তু তিনি নিবন্ধিত জেলে। আছে জেলে কার্ড। কার্ডের কারণে প্রতি বছর জেলে হিসেবে পান খাদ্য সহায়তা।
এই কথিত জেলের নাম বোরহান উদ্দিন। তিনি গণ্ডামারা ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য জান্নাত আরার ছেলে। বোরহান উদ্দিন উত্তর-পূর্ব বড়ঘোনা এশায়াতুল উলুম (দারুল হিকমাহ) ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
জেলেরা অভিযোগ করে জানান, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক ও স্বচ্ছল ব্যক্তিরা পর্যন্ত জেলে কার্ডধারী। মৃত কিংবা পেশা পরিবর্তনকারীরাও জেলে। কিন্তু প্রকৃত ও নতুন জেলেরা তালিকায় নেই। জেলেদের তথ্যমতে, তালিকায় ভুয়া জেলে রয়েছে কয়েক হাজার, আবার প্রকৃত জেলেও বাদ পড়েছেন কয়েক হাজার।
সচেতন মহলের মতে, জেলে কার্ডের মাধ্যমে সরকারি সহায়তা প্রাপ্তদের মধ্যেও হাজার হাজার কার্ডধারী রয়েছে, যারা জেলে না। প্রতি বছর তালিকা আপডেট করলে ভুয়া জেলে কমে যাবে এবং প্রকৃত জেলেরা তালিকাভুক্ত হবেন।
অপরদিকে সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য জান্নাত আরার বিরুদ্ধে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (১৯ নভেম্বর) গণ্ডামারা ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি কফিল উদ্দিন এই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এতে উল্লেখ করা হয়, বেকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর লোক দিয়ে রাস্তার মাটি কাটার নিয়ম থাকলেও জান্নাত আরা ছমদ আলী সিকদার নতুন বাড়ির রাস্তার কাজ কাবিখা কর্মসূচির আওতায় হলেও কাজ করেছেন স্কেভেটর দিয়ে। এতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দিনমজুর লোকজন তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। জেলে ভাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ১ হাজার টাকা ও যেকোনো কাজে স্বাক্ষর নেওয়ার সময় জান্নাত আরা ২০০ টাকা করে আদায় করেন জনসাধারণের কাছ থেকে। এছাড়া ধূপী পাড়া থেকে মোশাররফ আলীর দোকান পর্যন্ত রাস্তার জন্য আসা বরাদ্দ কোনো কাজ না করেই আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার বিষয়টি স্বীকার করে গণ্ডামারা ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জান্নাত আরা একুশে পত্রিকাকে বলেন, রাস্তার দুই পাশেই বড় বড় পুকুর। মানুষ তো পুকুর থেকে ডুব দিয়ে মাটি তুলতে পারবে না। তাই আমি স্কেভেটর দিয়ে পুকুর থেকে মাটি নিয়ে রাস্তার কাজ করেছি। আর আমি জেলে ভাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কারও কাছ থেকে টাকা নিই নাই। এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
আপনার ছেলে তো পেশাদার জেলে নন। এ অবস্থায় জেলে ভাতার কার্ড কীভাবে পেলেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে বন্ধুবান্ধবদের সাথে মজা মাস্তি করার জন্য সাগরে যেত বোট নিয়ে। তখন আমার ছেলে মাদ্রাসায় চাকরি করত না। আর্থিক অনটন থাকায় জেলে ভাতা নিয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোরহান উদ্দিন একুশে পত্রিকাকে বলেন, তখন মাদ্রাসায় আমার চাকরি হয়নি। খুব অভাবের সংসার ছিল। তাই জেলে ভাতার কার্ডে নাম লিখিয়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কমকর্তা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী একুশে পত্রিকাকে বলেন, যদি মহিলা মেম্বারের ছেলে হয়ে থাকে, তাহলে ওটা আমরা বাদ দেব। নিয়ম হচ্ছে প্রতিবছর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা আমাদের কাছে তালিকা পাঠাবেন। যদি কেউ মারা যায়, পেশা পরিবর্তন করে কিংবা বিদেশে চলে যায় তাহলে তারা আমাদেরকে তালিকা পাঠাবেন। তালিকা যাচাই-বাছাই করে আমরা বাদ দিয়ে দেই। যেগুলো তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে, সেগুলো আমরা বাদ দিতে পারবো না। বাদ দেওয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আবেদন আসতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের যিনি চেয়ারম্যান আছেন, আপনারা ওনাকে বলুন।