চট্টগ্রাম: বিয়ের প্রলোভনে সহবাস করে সটকে পড়ায় দেবরের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন ৩০ বছর বয়সী এক নারী।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. মোতাহের আলী মামলাটি (৪৯০/১৭) গ্রহণ করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে বিচারিক তদন্তের আদেশ দিয়েছেন। একই সাথে আগামী ৫ নভেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
অভিযুক্ত দেবর নুর মোহাম্মদ (২৭) নগরের ৩ নং ফকিরহাট পশ্চিম গোসাইলডাংগা এলাকার মৃত মোজাহারুল হকের ছেলে। বর্তমানে গোসাইলডাংগা এলাকার একটা ওষুধের দোকানের কর্মচারী।
মামলাটির ফাইলিং লইয়ার ছিলেন ফাইট ফর উইমেন রাইটসের প্রেসিডেন্ট এডভোকেট রেহানা বেগম রানু।
সোমবার দায়ের করা মামলাটির এজাহারে ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, গত ১৭ মে ২০০৩ জনৈক মনজুরুল আলমের সাথে সামাজিকভাবে তার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ৭ বছরের এক সন্তান রয়েছে। সংসারে বনিবনা না হওয়ায় গত ২৩ মাচ ২০১৭ উভয়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। সেই থেকে সন্তান নিয়ে নগরীর পশ্চিম গোসাইলডাংগার বেছা শাহ রোডে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকেন তিনি।
তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তার আগের সংসারের জেঠাত দেবর সেই বাসায় আসাযাওয়া শুরু করেন। নানা সহানুভূতি দেখিয়ে একপর্যায়ে তার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেন। প্রেম নিবেদন করে তাকে বিয়ে করবে বলে আশ্বস্ত করেন। অভিযোগকারী আসামির পীড়াপীড়িতে এই প্রস্তাবে রাজি হলে গত ৫ জুলাই ২০১৭ সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় শাহ আমানত শাহ’র মাজারে গিয়ে মাওলানার মাধ্যমে কালেমা পড়ে কোরআন স্পর্শ করে বিয়ে করেছেন মর্মে বিশ্বাস জন্মিয়ে অভিযোগকারীর বাসায় আসা-যাওয়া বাড়িয়ে দেন অভিযুক্ত যুবক।
আসামি গত ৫ জুলাই রাত ১১ টায় এবং ২১ জুলাই রাত সাড়ে ১১ টায় অভিযোগকারির সাথে সহবাসে মিলিত হন। পরবতীতে আসামী আবারো সহবাস করতে চাইলে অভিযোগকারী তাতে অনীহা প্রকাশ করেন এবং কাবিননামা সম্পাদন করে অভিযোগকারীকে আসামীর জওজিয়তে নিয়ে যেতে বলেন। আসামী কালক্ষেপণ করলে এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে গত ১৬ আগস্ট ২০১৭ আসামী অভিযোগকারীকে সাফ জানিয়ে দেন, তিনি কোনো কাবিননামা সম্পাদন করবেন না। তিনি কোনোরূপ বিয়ে করেননি এবং অভিযোগকারীকে নিজ জওজিয়তে নেয়ার প্রশ্নই আসে না। এতে অভিযোগকারী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন বলে মামলার আর্জিতে উল্লেখ করেন।
বাদি পক্ষের আইনজীবী রেহানা বেগম রানু একুশে পত্রিকাকে বলেন, আসামী অভিযোগকারীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে প্রেম-প্রতারণার মাধ্যমে মাজারে গিয়ে বিয়ে করেছেন মর্মে বিশ্বাস জন্মান। তারপর অভিযোগকারীকে সহবাসের নামে ধর্ষণ করেন। পরে কাবিননামা সম্পাদন না করা ও নিজ জওজিয়তে নিয়ে যেতে অস্বীকার করার মাধ্যমে আসামী নুর মোহাম্মদ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৯(১) ধারায় গুরুতর অপরাধ সংঘটন করেছেন। বিজ্ঞ আদালত বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে মাননীয় মহানগর হাকিমকে বিচারিক তদন্তের আদেশ দিয়েছেন। যোগ করেন এডভোকেট রেহানা বেগম রানু।
অভিযোগকারী একুশে পত্রিকাকে বলেন, আসামী নুর মোহাম্মদ বয়সে আমার ছোট। তাছাড়া আগের স্বামীর ভাই হওয়ায় আমি তার সাথে সম্পর্ক কিংবা বিয়েতে জড়াতে চাইনি। আমার দুর্বলতা ও সরলতার সুযোগ নিয়ে, অতিমাত্রায় সহানুভূতি দেখিয়ে সে আমার সাথে মাজারে গিয়ে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয়। এরপর সে আমার সাথে সহবাস করার পর সবকিছু অস্বীকার করছে। এই অবস্থায় আর কোনো উপায় না দেখে আমি আদালতের আশ্রয় নিতে বাধ্য হলাম।