খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদে আন্তরিকতার ঘাটতি নেই : মেয়র নাছির

চট্টগ্রাম: যত দ্রুত সম্ভব চট্টগ্রাম নগরীর ৫৭টি খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে চান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

সোমবার বিকেলে আন্দরকিল্লার বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন মেয়র। নগরীর প্রাকৃতিক খালগুলো থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের জন্য গঠিত টাস্কফোর্স, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জারিকৃত পরিপত্রের নির্দেশনা যথাযথ অনুসরণপূর্বক চসিকের সঙ্গে সেবাদানকারী সংস্থার সমন্বয় এবং ভূমি ও ইমারতের বার্ষিক মূল্য নির্ধারত বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মেয়র বলেন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ সময় বেঁধে দিয়ে করা সম্ভব নয়। আমার আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। যত দ্রুত সম্ভব আমি করতে চাই। অনেক জায়গায় খালপাড়ে উচ্ছেদ করতে যাব সেই পরিবেশ নেই। পায়ে হেঁটে যাওয়ার অবস্থাও নেই। যন্ত্রপাতি নেওয়া যাবে না। এ চ্যালেঞ্জগুলো আছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে যে খালটি আগে ধরলে নগরবাসী উপকৃত হবে সেটি আগে উচ্ছেদ করা হবে। চাক্তাই খাল ও মহেশখালকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, সংকীর্ণতার সুযোগ নেই। আমরা কেউ স্থায়ী নই। শহরটা স্থায়ী। আমরা চাইছি একটি পরিকল্পিত সর্বসাধারণের বসবাসযোগ্য নগর উপহার দিতে। চসিকে জনপ্রতিনিধি আছে। তাই সিটি করপোরেশনই উচ্ছেতে নেতৃত্ব দেবে। আইনের ঊর্ধ্বে সিটি করপোরেশন নয়। আমি এটা কথা দিতে পারি, নালা-খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আমার ওপর আস্থা রাখতে পারেন।

সমন্বয়হীনতা উপলব্ধি করেছেন জানিয়ে মেয়র বলেন, চসিকের অবকাঠামোয় বিভিন্ন সরকারি সংস্থা নিজস্ব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে চসিককে অবগত না করে অসমন্বিতভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পাদন করছে। সমন্বয়ন না থাকায় চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমে জলাবদ্ধতা, জনদুর্ভোগসহ নানান সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। সংস্থাগুলো চসিককে প্রকল্প বিষয়ে আগে অবগত না করানোর ফলে অনেক সময় উন্নয়ন কার্যক্রমে ওভার লেপিং হচ্ছে। এটা আমি উপলব্ধি করেছি। আমার আগে যেসব শ্রদ্ধেয় মেয়র মহোদয়রা ছিলেন উনারাও উপলব্ধি করেছেন। বারে বারে উচ্চারণ করেছেন।

তিনি বলেন, নগরে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা কর্তৃক সরকারের যেকোনরূপ উন্নয়ন কার্যক্রম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে অবগতকরণপূর্বক সম্পাদন করলে চট্টগ্রামকে জনদুর্ভোগহীন পরিকল্পিত নগরে পরিণত করা সম্ভব হবে। চসিক নিয়মিত সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়ে থাকে। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকল উন্নয়ন কাজে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয়ের বার বার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও বাস্তবিকপক্ষে কোনো সংস্থাই কার্যকর সমন্বয়পূর্বক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে না।

তাই চট্টগ্রামকে জনদুর্ভোগ ও জলাবদ্ধতামুক্ত করতে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন সরকারি সংস্থা কর্তৃক সিটি কর্পোরেশনের অবকাঠামোয় নিজস্ব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে অবহিতকরণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ একান্ত আবশ্যক বলে মনে করছি।

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, নান্দনিক বাসযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তুলতে হলে কর বিধিমতে কর নির্ধারণ ও আদায়ের বিকল্প নেই। বকেয়া কর, ট্রেড লাইসেন্স ফি, টোল ইত্যাদি যথাসময়ে পরিশোধ নাহলে বাসযোগ্য নান্দনিক শহর গড়তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। সঠিকভাবে কর আদায় নাহলে কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা থাকবে না, ফলে কর্পোরেশন নিজ আয়ের উপর শক্তিশালী না হয়ে একটি নির্ভরশীল দুর্বল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। কর বিধিমতে আইনানুযায়ী কর নির্ধারণের জন্য সরকারি চাপও রয়েছে। আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেই কর নির্ধারণ ও আদায় বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনাপূর্বক নগরবাসীর স্বার্থে আইনমতে নিরপেক্ষভাবে কর নির্ধারণ এর মতো কঠিন কাজটি নগরবাসীর আন্তরিক সহয়োগিতায় যথাযথভাবে সম্পন্ন করেছি।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরীকে একটি কাংখিত বাসযোগ্য নগরী গড়ার আমার যে দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে তা শতভাগ বাস্তবায়নে আমি সকল সম্মানিত সংবাদকর্মী ও সর্বস্তরের সম্মানিত নাগরিক- এর কাছ থেকে আন্তরিক সহযোগিতা ও পরামর্শ কামনা করে বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর বিলবোর্ড উচ্ছেদ, বর্তমানে হকারদের শৃংখলার মধ্যে আনায়ন এবং ভ্যানগাড়ীতে ব্যবসায় নিয়োজিতদের নির্দিষ্ট টাইমফ্রেমের মধ্যে আনার একটি দুরুহ কাজ সম্পাদন করা হয়েছে।

মেয়র বলেন, এ নগরীর উন্নয়নের স্বার্থে এবং দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার কারনে যে কোন ঝুকি নিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত। এ বিষয়ে তিনি মিডিয়ার সংযোগিতা কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলর, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।