চট্টগ্রাম ওয়াসায় কম লাভে এফডিআর থেমে নেই, নেপথ্যে ‘কমিশন বাণিজ্য’


এম কে মনির : আবারও কম লাভে ফিক্সড ডিপোজিট রেট (এফডিআর) বা স্থায়ী আমানত জমা রাখছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। গত ১৭ জুলাই ১ কোটি ৫৮ লক্ষ ৫ হাজার ৮২৫ টাকার একটি এফডিআর বার্ষিক ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে পুনরায় নবায়ন করতে চট্টগ্রাম ওয়াসাকে চিঠি দেয় ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড চট্টগ্রাম জুবলী রোড শাখা। একই মাসের ২৬ তারিখে বার্ষিক ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে এফডিআর জমা রাখতে ওয়াসাকে চিঠি দেয় এবি ব্যাংকের সিডিএ এভিনিউ শাখা ও ইউনিয়ন ব্যাংকের ওআর নিজাম রোড শাখা।

এরপর গত ৩০ আগস্ট ৯ শতাংশ সুদে এফডিআর রাখতে দ্বিতীয় দফায় চট্টগ্রাম ওয়াসাকে আবারও চিঠি দেয় ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের জুবিলি রোড শাখা। কিন্তু আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে এসে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে আইএফআইসি ব্যাংক চকবাজার শাখায় ১ কোটি টাকার এফডিআর জমা করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা! অথচ ৮ দশমিক ৭৫ ও ৯ শতাংশ সুদে তিনটি ব্যাংক এফডিআর জমা করার প্রস্তাব চট্টগ্রাম ওয়াসার হাতে ছিল।

বেশি লাভে এফডিআর জমা করার পর্যাপ্ত সুযোগ থাকার পরও কেন কম লাভে এফডিআর রাখছে চট্টগ্রাম ওয়াসা? এর আগেও গেল মার্চে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে এফডিআর জমা রাখতে চট্টগ্রাম ওয়াসাকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা। কিন্তু এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এসে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ মুনাফায় চট্টগ্রাম ওয়াসা এফডিআর জমা করেছে একই ব্যাংকের দেওয়ানহাট শাখায়৷ অর্থাৎ একই ব্যাংক হলেও কম লাভে দেওয়ানহাট শাখায় এফডিআর জমা করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা৷

অভিযোগে উঠেছে, এই বেশি লাভের প্রস্তাব থাকার পরও কম লাভে এফডিআর জমা করার নেপথ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার অসাধু কর্মকর্তাদের কমিশন বাণিজ্য। মূলত ব্যাংকের যেসব শাখায় চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের কমিশন পান সেসব শাখাতেই কম লাভে এফডিআর জমা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে রাষ্ট্র। চট্টগ্রাম ওয়াসার কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরস্পর যোগসাজশে এসব অনিয়ম-দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত আছেন বলেও অভিযোগ আছে।

জানা যায়, প্রতিটি কাজের অডিট ছাড়ের পর চেক লেখা হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠান আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার মতো সিদ্ধান্তে সিনিয়র অডিট অফিসার রক্তিম দেব কীভাবে প্রস্তাব অনুমোদন দিলেন সেই প্রশ্নও সামনে এসেছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চট্টগ্রাম ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক (উপসচিব) কাজী শহিদুল ইসলামকে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

একই বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার সিনিয়র অডিট অফিসার রক্তিম দেব একুশে পত্রিকাকে জানান, তিনি এফডিআরের মুনাফার রেট বৃদ্ধি নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ করেন। কীভাবে লাভের হার বাড়ানো যায় সেজন্য তার চেষ্টার কোনো কমতি নেই। এমনও হয়েছে ৫ শতাংশ বাড়াতে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করে সফলও হয়েছেন। তবে এফডিআর রিনিউ হলে তার কাছে সেসব ফাইল আসে না। কেবল নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি অডিট করে থাকেন। রাষ্ট্র ক্ষতির মুখে পড়বে, এমন কোনো কিছুর সাথে তিনি মোটেও জড়িত নন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ দিন ধরে চট্টগ্রাম ওয়াসায় এফডিআর নিয়ে দুর্নীতি চলছে। কয়েক বছর আগেও পাকিস্তানের ব্যাংকে এফডিআর জমা রাখার ঘটনা ঘটেছে। এফডিআর জমা রাখার বিষয়ে স্থায়ী কমিটি গঠন করা গেলে এ কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হতে পারে বলেও মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ডিএমডি (উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ) লাল হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘বেশি লাভে রাখার চেয়ে আমাকে দেখতে হবে আমার টাকাগুলো নিরাপদ কিনা? আমাকে টাকাগুলো ঝুঁকিমুক্ত জায়গায় রাখতে হবে। এটিই বিবেচ্য বিষয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের যেসব বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় রয়েছে সেগুলোও আমরা সরিয়ে নেব। আর আগামীতে আমরা ৩ মাসের বেশি মেয়াদের কোনো এফডিআরে আর যাবো না।’

এসময় বেশি লাভে এফডিআর জমা রাখার প্রস্তাব দেওয়া ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এবি ব্যাংককে চট্টগ্রাম ওয়াসা এফডিআর জমা রাখার জন্য অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একটি মিটিংয়ে আছি। আপনি ভালো থাকবেন।’

বেশি মুনাফার প্রস্তাব থাকার পরও কম লাভে এফডিআর জমা রাখা হচ্ছে কেন? এতে কি রাষ্ট্র ক্ষতির মুখে পড়ছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়াসার এমডি এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘এসব বিষয়ে মুঠোফোনে কথা বলা খুব কঠিন।’ বলেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।